চন্দ্রাহত

চন্দ্রাহত...
-------------
              
   একটা গোটা চাঁদ পূর্ণিমার
   ঢেকে দিচ্ছে কালো হাত
   খেজুরে আলাপ কল্পণার
   মেখে খাচ্ছে পোড়াভাত...
           
  জোছনা পাতে এই রাতে
   দাওয়াত না কি হাতছানি
   চশমা খোলা দুই চোখে
   উপচে ওঠে সে ফুলদানি...
              
   ফুলের আলো নরম লাইট
   গরম কড়ায় অল্প স্যাঁকা
   পূর্ণিমা  চাঁদ  পরম সাইট
    বর্ণমালাতে  মধুতে  মাখা...
             
   চন্দ্রবিন্দুর চাঁদ ফ্য্যাকাসে
   কালোহাতে বিন্দু শেখায়
   প্রথমরাতে বড্ড একা সে
   মুছে ফোটা আয়ু রেখায়.. .
             
আসলে গ্রহণ লেগেছে কবিতায়
রাহু-কেতু এসে মাথা খায়
পক্ষীরাজ আসে তিনবার লাফায়
জোছনা লুটোয় বারান্দায়...
            
অনেক চাঁদ এখন স্যাটেলাইট
দম দেওয়া আকাশ ভিতে
খোলস ছাড়া  বোতলই পাঁইট
মাতাল মাপে অলীক ফিতে...

সুদীপ ব্যানার্জী

বেঁচে আছি টুকরোয়

বেঁচে আছি টুকরোয়
সুদীপ ব্যানার্জী,ধণিয়াখালি

কিছু নেই এদিকে। শুধু খালি খালি হাত দুটো।
ভেসে এলে খড়কুটো, মুঠো ভরে বুকে নিই।
আয়নার পাশে বসে, নির্ভার মহাকাশে রাত নেই।
জাত নেই। অভিঘাত নেই। মসৃণ যাতায়াত এ।

একটু খড় আর মাটি, চেয়ে রাখি।কিছু ঋণ এ।
গড়া হলে মূর্তিটি,ফেলে রেখে সেকেলে চাবিকাঠি,
দৌড়াই।ফিরে আসা। বিকেলের ট্রেনে চাপি।

পাশাপাশি কেউ নেই...হুইসলে একা বাজি...

দেখা হলে কথা বলে নিরিবিলি,খুলে রাখা জানলাটি..

পাখিসব প্রজাপতি। উড়ে গেছে রাতারাতি। বাগানে।
আয়নার সামনে রঙ মাখি অবয়বে। মুছে যাবে খুচরোয়।

ছাই মেখে শবদেহে রাত নামে। সমারোহ।কাতরাই।

সাঁতরাই মহাকাশে।একলাই নগদে।
পাশে  মৃত কে ও?

সাথে ছিল সেও। তবু খড়কুটো আর মাটি আনি।
তুলি দিয়ে রেখা টানি।

গড়া হলে মূর্তিটি...
ভাঙি এ আয়না। মন কেও চায় না।

বেঁচে থাকা টুকরোয়।

জনতার নামতা

জনতার নামতা

--------------------------------------------

    সত্যের ললাটে বার হাত ঘোমটা
    দায়হীন তথ্যই জনতার নামতা
   

♥     সে ছিল এক যুগ।মহাকবির জমকালো খাগের কলম দাগিয়ে দিয়েছে "সত্য যুগ" আখ্যায়।আহা! কোথায় হারাল সে সাজানো বাগান!সে সময়ের কুশীলবেদের কুশ পুত্তলিকায়  আগুন ধরিয়ে জাস্ট সেঁকে নেবো আজকের ন্যাতানো বিড়িগুলো--এ খোয়াইশ্ আমার বহুদিনের।যাই হোক...সে সব হায়ারোগ্লিফিক,মনোলিথ, সিস্টোলিথ প্রায় পুরাণের হাইড্রলিক ফাটিয়ে আমি এখন আধুনিক।পেরিয়েছে দ্বাপর,ত্রেতা। তবে গল্পের ক্রেতা কমেনি।কলিটাও যা তা!সেই যে ক'বে থেকে এঁটে বসেছে... ব্যাটা আস্ত একটা" গিলগমেশ"!"অতিথি তুম কব যাওগে?" কেস।তবে বেঁচে থাক্ ভাই অন্তর্জাল!হাল ধরেছে ঠিক।মানে,দেখুক পাড়া পড়শিতে, কেমন যুগ এনেছি পৃথিবীতে।কলির ওই ল্যাতল্যাতে পটলের ঝোল আর ট্যালট্যালে অম্বলের অজীর্ণ রোগে শীর্ণ উদাসী পেটে চাড্ডি বিরিয়ানি আর পাঁঠার ঝোল।খালি নেট খোল ---একটা কচি যুগের ফড়ফড়ানি ফিল কর...তরতর করে এগিয়ে যাবে তরণি... হিভ্-এ-হৈ...হিভ্-এ-হৈ...মার তড়কা মসালা...ডাগর যুগের নধর গতর দিব্যি ঘাই মারবে বুকে।যেই না বলেচি গিন্নিকে এ কথা,ঘায়েল করা ভ্রূ দুখানা কুঁচকে প্রশ্নবাণ হানলেন,"ব্র‍্যান্ডের নামটি কি?"।কি মুশকিল, আমার কবিতার দিব্যি একটি ফোঁটাও আমি চাটিনি...দূর থেকে বোতলগুলির চাঁদপানা মুখগুলি দর্শণেই শালা নেশা ধরে যায়, লিভারে ধারণ করলে আবার কি আবাহন করিবে ভাবলেই ভির্মি খাই।জন্ম ইস্তক আমি না তোমার গুডি গুডি হাসবেন্ড! যাক্ গিন্নির কথা।সন্দেহ করাটা, ইয়ে মানে,...থাক আর বল্লুম না।কিন্তু গিন্নি না খেয়াল করেও একটা মোক্ষম প্রশ্ন তুলে গেছেন(একসাথে বসবাসের সাইড এফেক্ট)।ব্র‍্যান্ড!ইয়েস! প্রতিটি যুগই তো একেকটি ব্র‍্যান্ড!তা কি নাম এ যুগের?ডিজিটাল?ধুর...নামে তো আভিজাত্য চাই।এই যেমন ---সুদীপ পেলে ব্যানার্জী বা প্রিন্স কমল হিলসা সেন। মারলুম গুগল বাবা জীবনে সার্চ(আহা মেধার কি দুর্গতি)।ইউরেকা!মানে নাম লেখা।ধুমধাম নেচে নিলাম খানিক ক্ষণ।জিও মেরে লাল ইকোনমিকস। অন্নপ্রাশনের আগেই দাগিয়ে দিয়েছে ওরা --- Post Truth Era মানে আমাগো বাংলায় সত্য- উত্তর যুগ।তা মালটি কি?পাগলা ঝাঁঝ দেখিস না! এ নেহাত আমার তোর নোয়াপাতি জীবনের ভোর।সত্য যুগের রিমেক।রিমেকের মজা কোথায়?সবাই জানে এটা নকলি,তবু শোনে ... পারলে দু কলি নেচে নেয়।রিমেকের কোন দায় থাকে না(বাজারি রিমেক অবশ্যই)।তা এ যুগও সত্যের উপাসক।কিন্তু সে উপাসনায় তথ্য প্রমাণের দায় কেউ নেবে না।রিয়্যালিটি আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির তফাত এখানেই।শুধু কিছু লিখে ছেড়ে দাও...মুহুর্তে ভাইরাল... সত্যি না মিথ্যা, যাচাই করার সময় কোনও চাচারই নেই।কিছু একটা বলে দাও...আপনি চেপে যাবে ঘাড়ে...এ এমন মজার উলোট ঘোড়া।এই ঘোড়াই কারও ক্ষমতার ট্রাম্পকার্ড..রাজনীতি,জাতীয়তা-বাদ,অর্থনীতি,ধর্মনীতি, জীবন-যাত্রা মানে লাইফস্টাইল,সুস্থতা,যৌনতা,কবিতা,জটিলতা,যুদ্ধ..,সাংবাদিকতা আর লাখ লাখ মিডিয়ার এটিই বর্তমান ধর্মকাঁটা।সুতরাং হে পোস্ট ট্যাগানো,অঙ্গুলি হেলানো নব্যযুগের কাণ্ডারিগন... একে একে নিজের পয়দা করা ইতিহাস, ভূগোল ছড়িয়ে দিন...কেউ প্রশ্ন করবে না সত্য-উত্তর এ যুগে।বরং দৈববাণিবৎ বিশ্বাস করিবে।সোসাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলিই এখন নিত্য পঠিত পপুলার ধর্মগ্রন্থ।আর আলবার্ট পিন্টোর গুসসা হ'লে হবে...আমরা জেনারেল পাব্লিক! সব ক্ষেত্রেই আমরা ধার্মিক।বিশ্বাসে মিলায়ে প্রগতি... তর্কে শুকাবে সমুদ্দুর...তাই না?

             ♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

সুদীপ ব্যানার্জী

তিনটি লেখা...