বৃত্তের বাইরে (BRITTER BAIRE)

বৃত্তের বাইরে
সুদীপ ব্যানার্জী

স্টেশনের এদিকটাতে চট্ করে কেউ আসে না।প্ল্যাটফর্ম শেষ হতে না হতেই লাইন দুটোর চারপাশে অন্ধকার। টয়লেটের দূর্গন্ধ পেরিয়ে ঝোপঝাড় আর কিছু শ্যাওড়া গাছের ছায়া নিয়ে জায়গাটির দুর্নাম অনেকদিনের।
          সিগনাল পোস্টের আগে এই গা ছমছমে পরিবেশ!বেশ এনজয় করছি একাকীত্বকে।এই যে জনবহুল স্টেশনের এতো কাছে আমি "নেই"হয়ে গেছি,ভেবে বেশ আনন্দ হল।আসলে বরাবরই আমি একটু চুপচাপ, পালানো গোছের। ক্লাস নাইনে জ্যামিতি ক্লাসে কম্পাস নিয়ে বৃত্ত আঁকতে গিয়ে প্রথম রিয়েলাইজ করি ব্যাপারটা।যেখানেই ঘটনার সূত্রপাত, আমি পত্রপাঠ কম্পাসের আওতার বাইরে।হঠাৎ মনে পড়ে গেল মলয় স্যারের হাতের কাঠের জ্যামিতি বক্স।না,ঐ বড় কম্পাসের র‍্যাডারও ক্যাচ করতে পারে নি আমায়।এই যে যা ঘটছে, সেখান থেকে আমি বেরিয়ে গেলাম,আর মঞ্চে প্রবেশ করল কুশীলবেরা একে একে,আমি তখন নিবিষ্ট চিত্তে দর্শক আসন গরম করছি,প্রতিটি মুভমেন্টের নোট রাখছি।এ অভ্যাস বেশ রপ্ত করেছি। এখন যে মেয়েটি ১নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছে ঘণ ঘণ,ও কি জানে ওর মুখের দুশ্চিন্তার ছাপ অনেকটা প্লাস্টারওঠা হলুদ দেওয়ালের মতো।ও কি বুঝতে পারছে আমি ওর মোবাইলের দাম আন্দাজ করছি আর ভাবছি মেয়েটা এতো টাকা পেলো কোথায়?ও কি জানে ওর পাশে বেঞ্চে বসে থাকা টেকোটা ঘুমে ঢুললেও চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে ওর শরীরে? এ সব বৃত্তের বাইরে না গেলে জানতে পারতাম কি?স্থান মাহাত্ম্য কি না জানি না,আমি যেন দিব্য দৃষ্টি পেয়েছি। খুব হাসি পাচ্ছে।যে আমি কিনা চিরকাল ঘটনার সেন্ট্রাল স্টেজ ক্যানো,বাউন্ডারি লাইনেও দাঁড়াইনি কোন দিন,দেখতে পাচ্ছি --সেই আমাকেই স্ট্রেচারে করে চারজন লাল জামা পরা লোক নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার এই জায়গাটা থেকে।

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

তিনটি লেখা...