মড়া (The Dead)


                    মড়া (The Dead)

              (ভাবানুবাদ)

(নভেলা - জেমস জয়েসের "THE DEAD")

   কেয়ারটেকারের মেয়ে লিলি হোঁচট খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।এই ভদ্রলোককে একতলার অফিসের পিছনে ভাঁড়ারঘর দেখিয়ে দিয়ে তাকে ওভারকোট খুলতে সাহায্য করতে না করতেই--- হলের দরজার ঘন্টা আবার নাভিশ্বাস তুলে বেজে উঠলো।ও আবার ফাঁকা হলঘর পেরিয়ে তাড়াতাড়ি নতুন অতিথিকে ঢুকিয়ে নেবে।একদিক দিয়ে খুব ভাল হয়েছে যে মহিলাদের দেখভালের দায়িত্বও ওর ঘাড়ে পড়েনি।কেট ম্যাডাম আর জুলিয়া ম্যাডাম কিন্তু এটাও ভেবেছিলেন... আর ওপরতলার বাথরুমটাকে মহিলাদের ড্রেসিংরুম করে দিয়েছেন।ওখানেই ওরা আছেন,লোকের কেচ্ছা কেলেঙ্কারি রসিয়ে আলোচনা চলছে,  হাসছেন আর ব্যতিব্যস্ত হয়ে এ ওর পিছু পিছু সিঁড়ির মাথায় উঠে পড়ছেন,রেলিং এর ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখছেন খালিখালি  আর লিলিকে ডেকে পাঠাচ্ছেন কে এলো জানতে।


মিস মর্কানের এই নাচের অনুষ্ঠান মানেই এক বিরাট ব্যাপার।যারা ওদের চেনেন,সবাই আসেন অনুষ্ঠানে --- পরিবারের সদস্যরা, পুরোনো বন্ধুবান্ধব, জুলিয়ার ক্যয়ারের সদস্যরা,কেটের ছাত্রদের মধ্যে কেউ একজন যে বেশ লায়েক হয়ে উঠেছে... এমনকি  মেরি জেনের কিছু ছাত্রছাত্রীও আসে।

    একবারের জন্যও কিন্তু এই অনুষ্ঠান নমো নমো করে হয়নি।বছরের পর বছর ধরে,যদ্দুর মনে পড়ে আর কী , জাঁকজমক করেই হয়েছে --সেই  যবে থেকে কেট আর জুলিয়া তাদের ভাই প্যাট মারা যাওয়ার পর স্টোনি ব্যাটারের বাড়ি ছেড়ে তাদের একমাত্র ভাইঝিকে নিয়ে আসার আইল্যান্ডের এই অন্ধকার নিরিবিলি ঘরটাতে থাকতে এসেছেন।ওপরতলাটা ওরা মি.ফুলহ্যামের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন।একতলায় মি.ফুলহ্যামের চাল,ডাল,গমের ব্যবসা।এও নয় নয় করে প্রায় বছর তিরিশ আগের ঘটনা। মেরি জেন তখন খাটো পোষাক পরা ছোট্ট মেয়েটি ছিল।এখন সেই মেরি জেনই এ পরিবারের হর্তাকর্তা কারণ হ্যাডিংটন রোড চার্চের অর্গানটির মালিক সে।একাডেমিতেও সে গেছে ,বছরে একবার এনসিয়েন্ট কনসার্ট রুমের ওপরের ঘরে কনসার্ট আয়োজনও করে।ওর বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীই কিংগসটাউন আর ডাল্কি লেনের বড়বাড়ির ছেলেমেয়ে।বুড়ি হয়ে গেলেও ওর পিসিরাও যথেষ্ট করেন।জুলিয়ার চুল সব পেকে গেলেও ওই "এডাম এন্ড ইভ" এ মূখ্য বালিকাকন্ঠ। আর কেট খুব দুর্বল,এদিক ওদিক বেশী ঘোরাঘুরি করতে না পারলেও পেছনের ঘরে পুরোনো চৌকো পিয়ানো নিয়ে বাচ্চাদের গান শেখায়।লিলি, ঐ কেয়ারটেকারের মেয়ে,ওদের কাজের লোক।


    ওরা খুব সাধারণ জীবন যাপন করলেও ভালমন্দ খাওয়াদাওয়ায় বিশ্বাস করতো  --সেরা খাবার হাড়অালা গরুর দাবনার মাংস,তিন সিলিং এর চা আর সেরা স্টাউটের বোতল --- চাইই।তবে লিলির কাজে ভুল প্রায় হয়ই না বলা চলে।তাই ওর এই তিন মালকিনের সাথে ভালই ব'নে।শুধু, এরা খুব ব্যস্তবাগীশ । কিন্তু মুখের ওপর কথা বলা একদম সহ্য করে না।অবশ্য এরকম এক রাতে ব্যস্ততার যথেষ্ট কারণ আছে।তার ওপর আবার অনেকক্ষণ হল ১০টা বেজে গেছে, কিন্তু গ্যাব্রিয়েল আর তার গিন্নির এখনও কোনও পাত্তা নেই।তাছাড়া ফ্রেডি ম্যালিন্সকে নিয়েও ওদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই -- সে যদি বেহেড মাতাল হয়ে হাজির হয়।ওরা চাননা এই মাতাল অবস্থায় ওকে ম্যারি জেনের ছাত্রছাত্রীরা দেখে ফেলুক।আর মাতলামি করার সময় ওকে মাঝে মাঝে সামলানোও দায় হয়ে ওঠে।ফ্রেডি ম্যালিন্স তো সবসময়ই দেরী করে,কিন্তু গ্যাব্রিয়েল এখনও কেন এসে পৌঁছাতে পারলো না ভেবে ওরা বেশ অবাক।তাই তো ওরা দুমিনিট পরপর রেলিং এর ধারে এসে লিলির থেকে ফ্রেডি বা গ্যাব্রিয়েল এলো কি না জেনে নিচ্ছেন।
 


   গ্যাব্রিয়েলকে দরজা খুলে দিতে দিতে লিলি বললো, "ও,মি.কনরয়,মিস কেট আর মিস জুলিয়া তো ভাবছিলেন আপনারা আজ আর আসতেই পারবেন না।শুভরাত্রি মিসেস.কনরয়।"।গ্যাব্রিয়েল বললো," আরে ভাববারই কথা।কিন্তু ওনারা ভুলে গেছেন   যে আমার গিন্নি সাজুগুজু করতে  গিয়ে জলজ্যান্ত তিনটে ঘন্টা মেরে ফেলেন।"মাদুরের ওপর দাঁড়িয়ে উনি রবারের জুতোতে লেগে থাকা বরফের কুচি চাঁছতে লাগলেন আর লিলি সিঁড়ির তলায় ওনার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো," মিস কেট,মিসেস কনরয় এসেছেন।"



সঙ্গে সঙ্গেই কেট আর জুলিয়া হুড়মুড় করে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন।দুজনেই তাকে চুমু দিলেন,বললেন তিনি বোধহয় মরেই গিয়েছিলেন এদ্দিন আর গ্যাব্রিয়েল তার সাথে এসেছেন কি না জানলেন।"আরে কেট আন্টি, এই তো আমি,পোস্ট করা চিঠির মতোই ঠিক সময়ে এসে গেছি।তোমরা ওপরে যাও।আমিও তোমাদের পেছন পেছন যাচ্ছি।",অন্ধকার থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন গ্যাব্রিয়েল। তিন ভদ্রমহিলা সিঁড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে মহিলাদের ড্রেসিংরুমের দিকে এগোলেন আর তিনি সজোরে তার জুতো থেকে বরফের কুচি চাঁছতে শুরু করলেন।তার ওভারকোটের কাঁধের কাছে ঝালরের মতো তুষার  হাফকোটের মতো জমে আছে আর তার রবারের জুতোর বুড়ো আঙুলের কাছে বরফ জমে আছে যেন একটা বুড়ো আঙুলের খাপ।

(চলবে)

ভাষান্তর - সুদীপ ব্যানার্জী (৮৯০০৫০০৭৫৫)

তিনটি লেখা...