এবার তিন (EBAR TIN)


হ্যাংলা
সুদীপ ব্যানার্জী




এই যে আমি দোলাচল ভুলছি
অভ্রের চেয়ে চকচকে কপালে পাউডার বুলোচ্ছি
আর চায়ের এঁটো কাপ থেকে প্রতিফলন সেঁকছি
এসব ইতিহাস শেকড়বাকড় মাদুলি হয়েছে ঘড়িতে

বিফলে টাকা ফেরতের গল্পটা শেষ হয়নি এখনও
আঙ্গুঠাছাপ কাগজ টিপ পরবে
আমার ধ্যাবড়া অস্তিত্বকে স্যালুট করবে

জানেমন এ কোনও নাবালক আবদার নয়
মাঝবয়েসী হ্যাংলামি





   দেওয়াল লিখন কিংবা গ্রাফিটি
-----------------------------------------------------
সুদীপ ব্যানার্জী

বাঁকাট্যারা ইজ্জৎ নিয়ে লোফালুফি

লোপ্পা ক্যাচ কুঁকড়ে মাইরি অবাক দুলহন দেখি

সাপ্টে ধরে থাকি চেকনাই লাগা পেট

সেঁধিয়ে ডার্কনেস ঘেরা চত্বরে সিটি মারছি

উরিব্বাস কিছু তনহা খাল আটকে  উবু বসে

"হায় বেবি" ঠাকুর না স্কেলিটন বুলোই

কিল মারলে মরদ আমার খিদে জুটে যায়

বস্ শুধু দু-টাকা কেজি অন্ন পাঠাও রেডিমেড

স্ট্যান্ডফ্যানে ওড়না জড়িয়ে ঝুলবো




   অজুহাত
সুদীপ ব্যানার্জী

জবাবদিহিতে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে যা

আবার খেলনা হারালে ছেলেবেলার

এইবার আমি ঠিক কেঁদে উঠবো সোনা

বার বার অবহেলায় চুপ করে থাকা

ঈশ্বর সহ্য করার সীমানায় কমা -বাড়া রেখো না

আপার লিমিটে লোয়ার লিমিটে দুব্বো ঘাস

খেলনাটা স্বপ্নে গোল চিবুচ্ছে একমনে

এ সময় পিছু ডাক শুনলেও ফিরে এসো না

প্রতি শণিবার ধুপ জ্বালানোটা  অভ্যাস...


   
সুদীপ ব্যানার্জী
               ধণিয়াখালি,হুগলী।                

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

বাসি লবানের দেশে -২ (BASI LOBANER DESHE-2)

           
বাসি লবানের দেশে -২
সুদীপ ব্যানার্জী
head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

(আগের অংশ পড়তে ক্লিক করুনhttps://sudipbanerjee1982.blogspot.in/2017/11/blog-post_18.html?m=1)

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>




এই মুহুর্তে অজয়ের ব্রিজ পেরোচ্ছে আনুদার বাস। বাদশাহি সড়ক এখন চকচকে পাকা রাস্তা,মসৃণ গতিতে ঝিমুনি এসে যাওয়াই স্বাভাবিক।কিন্তু ঐ যে "সুরথদা কলিং"!ওপার থেকে যে গলা ভেসে এলো, তাও তো শোনা হয় নি বেশ কয়েক বছর।"ভাই,শুনলাম সব।কিন্তু আমি যে যাব... একটা সি.এল.ও বেঁচে নেই...তুমি ঘুরে এসো... বেস্ট অফ লাক"।এই কথোপকথনের মাঝেই চোখ চলে গেল অজয়ের দিকে।শীত শেষ হয়েছে আগেই,তবু ভোরবেলা হাওয়ায় শিরশিরানি ভাব একটা লেগেই ছিল।এখন সূর্য কিছুটা তেতেছে।বাসের জানলা খুলে অজয়ের দিকে দেখলাম।বালি আর বালির মাঝে তিরতির করে বয়ে চলেছে সরু রূপালি সূতোর মতোই।হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেই বর্ষার কথা। বিকেল থেকেই আকাশ থমথমে।রাতের দিকে শুরু হল টানা বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন।মদন স্যার,অভিঞ্জ মানুষ,খুব বেশি দূরে বাড়ি নয়, তবু বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে মেসেই বসবাস তার ---এ মেসের ফাউন্ডার-কাম-গার্জেন।ঘন ঘন মাথা নাড়ছেন আর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জড়িয়ে জড়িয়ে বললেন,"এ তো বাণ ডাকা মেঘ রে,মাধব।"তা এই মেঘ ডাকা মেঘের কি মহিমা বুঝলাম সকালবেলাতেই।সাধারণত আমি লেট-রাইজার।ঘুম ভেঙে দেখি মেস ভোঁ ভাঁ।একজনও নেই।যে যার ব্যাগ গুছিয়ে ভোরবেলাতেই প্রথম বাসেই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে যে যার মতো।বৃষ্টি থামেনি বরং বেড়েই চলেছে।অগত্যা সাইকেল নিয়ে ছাতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে, এঁটেল  মাটিতে ব্যালেন্সের খেলা দেখাতে দেখাতে বাসস্টপেজ এ এসে পড়লাম।কিন্তু তাতে কি আর এই বাসি লবানের দেশের বৃত্তকে অতিক্রম করা যায়!এই বৃত্তের ব্যাস,পরিধি,জ্যা, কেন্দ্রকে চেনার খেলা এই বৃত্তের বাইরে থেকে স্কেল,কম্পাসে মাপলে কি আর মনের নাগাল পাওয়া যায়?"মাস্টারমশাই, দেরী করে ফেললেন যে।শেষ বাস বেরিয়ে গেল ৬-৩৫ এ।নতুনহাটের দিকে বাণ,আর তো বাস চলবে না।চলুন ফিরে যাই।আমিও দোকান বন্ধ করবো।আর দোকান খুলে কি হবে..."দাঁত বের করে যিনি একথা শোনালেন তিনি আবার ফিরবেন এই আখ্যানে যথা সময়ে।আপাতত মেসে ফেরা।তিনদিন একা রুমে, ইলেকট্রিকহীন,টাওয়ারহীন,শুকনো মুড়ি চানাচুরে পেটে কিল দিয়ে কাটানো।না,এ তিন দিন কয়েকটি কুকুর ছাড়া আর কোনও প্রাণীর শব্দ বৃষ্টির ঝমাঝমের বাধা সরিয়ে কানে আসে নি।পাশেই ঝোপঝাড়ে ঢাকা ঈদগাহ্।জানলা দিয়ে সামনে তাকালেই মিঞা সাহেবের পুকুর,পুকুর পেরিয়ে মসজিদ,আশেপাশে দিনের বেলাতেও ঘুমিয়ে বাসি লবানের দেশ।রাস্তায় লোকজন দিনের বেলাতেই দেখা যাচ্ছে না।এ অবিরাম বর্ষণ যেন মন্ত্রপূত জল,পুরো পৃথিবীকে ঘুম পাড়ানোর ব্রত নিয়ে কমন্ডলু থেকে নেমে আসছে প্রবল বেগে।অথচ আমার ঘুম নেই।বরং বলা যায় উড়ে গ্যাছে।দিনের
বেলাটা কেটে গেলেও সন্ধ্যাগুলি আর কাটে না।আসলে সন্ধ্যা তো নয় বিকেল থেকেই রাত নেমে আসে এ দেশে।আমি,কিছু অজানা পোকা,একটি মোমবাতি। বাসি লবানের দেশে আমার চারপাশে তখন জিন,পরি,হুরির জগত।রোমাঞ্চিত, ভীত আমি একসময় ঘুমিয়ে পড়ি স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নকে পাশবালিশে জড়িয়ে।বৃষ্টি থামতেই প্রথম বাসেই বাড়ির দিকে যাত্রা।বন্যা হয় বলেই এ অঞ্চলের রাস্তাগুলো উঁচু।দুদিকে মাঠ বলে আর কিছু নেই। শুধু জল আর জল।বড় বড় গাছগুলি একবুক ডুবে মাথা তুলে আছে শুধু।এই অজয়ে ব্রীজের ওপর দিয়ে যেতে গিয়ে বুঝলাম "বাণ" কি বস্তু।অজয় দুকূল ছাপিয়ে পাশের জমজমাট বাজারটিকেও  আপন করে নিয়েছে।সেই প্রথম হেলিকপ্টার থেকে রিলিফ ফ্যালা হচ্ছে দেখলাম...একদল মানুষ ছুটে চলেছে সেই রিলিফ আগে পাওয়ার জন্য।সবাই ছুটছে "রোটি,কপড়া, মকানের"পিছনে। এ ছুট বড় আদিম,বড়ই কষ্টের --এ ছুট স্বার্থপরতার। অথচ এটুকু স্বার্থপরতা না থাকলে প্রাণটাই যে টেকে না।সেদিনের অজয় আর আজকের এই সরু রূপালি শান্ত অজয় ---বাসি লবানের দেশ একবার ভাসায়, আরেকবার ডোবায়...আর এই ভাসা-ডোবার মাঝে এগিয়ে যায় দিন,মাস,বছর...এক নবান্ন থেকে আরেক নবান্নের অপেক্ষায়...

               
ঘড়িতে ৭-৩০ বেজে গেছে দেখে ডায়াল করলাম বাড়ির নম্বরে,"হ্যালো,ঘুম ভেঙেছে?নতুনহাট পেরোলাম।নেমে আবার কল করবো।"লাইন কেটে দিতেই সেদিনের মোবাইলটার কথা মনে পড়ে গেল।প্রথম সেট নোকিয়ার ছোটখাটো আর টাওয়ার পেতে কয়েক চক্কর দিতে হত মেস বিল্ডিংএ।আবার প্রথম দিনের কথা ফিরে ফিরে আসছে।বাস দশ মিনিটের ব্রেক নেওয়ার পর আবার শুরু যাত্রা।কন্ডাকটর এগিয়ে এসে জানাল,"আপনার পাশের মাস্টারমশাই যেখানে নামবেন সেখানেই আপনিও নেমে পড়বেন।"কথাটি পাশের "মিলিটারিম্যান"এর কানে গেল।প্রশ্ন এল, "কোথায় যাবেন?"।উত্তর দিতেই তিনি আমার নাম ও বাসস্থান জেনে বললেন, "আমি পাশের গ্রামের স্কুলেরই টিচার।"তারপর স্টপেজ এল...নামলাম...ভদ্রলোক নামলেন।


                       

আশেপাশের বেশির ভাগ গ্রামই মুসলিম অধ্যুষিত হলেও বাসি লবানের দেশ সদগোপ প্রধান।গ্রামের এক অংশে মুসলিম পরিবারগুলি নিজেদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা নিয়ে বাস করছে।আর অপর অংশে হিন্দু পরিবারগুলি মন্দির,হরিনাম কীর্তন, নানা পালা-পাবন নিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে।দুই ধর্মের মানুষ এত কাছাকাছি থাকায় এর সংস্কৃতিতে তার আর তারটিতে এর---চুপিসাড়ে কোন কালেই মিলে মিশে গেছে কথায়,রান্নায়,পোষাকে---কেউ খেয়ালই করেনি।এই মুহুর্তে বসে আছি গ্রামের মাত্র দু-ঘর বামুনঠাকুরের মধ্যে একজন ভুবন ঠাকুরের দালানে।ভদ্রলোকের এককালে কলেজ স্ট্রীটে নাকি বইয়ের দোকান ছিল।সেই সূত্রে প্রচুর বই পড়েছেন।মৃদুভাষী মানুষটি মাঝেমাঝেই আড্ডা দিতে আসতেন। সেদিন আমি গেছি ওনার বাড়ি একটি বইয়ের খোঁজ নিতে।ছাড়লেন না... অগত্যা চা খেতে খেতে গল্প করছি। বৌদি এরই মাঝে খোঁজ নিয়ে গেলেন আমি "ডিম ভাজি খাব, না সেদ্ধ"।ঐ যে বললাম চুপিসারে একের অভ্যাস অন্যে ছড়িয়ে গেছে বিন্দুমাত্র হাতাহাতি না করে...এখানে সবাই অতিথি আপ্যায়ন করে চা এর সাথে ডিম সেদ্ধ বা ভাজা (ভাজি) দিয়ে।ভুবন ঠাকুর শুরু করলেন,"...এই যে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে যেতে লাগল তার জাতিভেদ প্রথা ও অন্যান্য উদারতা নিয়ে, আর কিছুটা রাজানুগ্রহের খাতিরে...তা সেখান থেকে হিন্দু ধর্মকে এ অঞ্চলে বাঁচালেন চৈতন্যদেব..."।ভুবন ঠাকুর বলেই চলেছেন, কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার মন চলে গেল কাঁচা রাস্তায়।স্বাস্থ্যবান এক প্রৌঢ়, সোজা মেরুদন্ড নিয়ে গজরাতে গজরাতে চলেছেন।একটু ঠাহর করলেই শোনা যাচ্ছে"এই তো হয়েছে শিক্ষার দশা।সব হতচ্ছাড়া স্কুলে পড়ছে!বেয়াদপের দল।সভ্যতা শেখে নি...আর সব মাস্টারের দল...আগে যারা খেতে পেতো না মাস্টার হত...কি তাদের শাসন!আর আজকাল মাস্টাররা সব জমিদারের ব্যাটা...কোনও ডিসিপ্লিন নেই...ব্রিটিশ আমল হলে চাবকে পিঠের ছাল তুলে দিত।"এ ভদ্রলোককে আগেও দেখেছি রাস্তায় মাইকেল মধুসূদনের কবিতা গড়গড় করে বলতে বলতে রাস্তা পেরোতে।ব্রিটিশ আমলের থার্ডক্লাশ পর্যন্ত পড়াশোনা করা এই ভদ্রলোকটি আশেপাশের তিন চারটি গ্রামের মধ্যে একমাত্র মিষ্টির দোকান "অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার"এর মালিক।তবে তিনি এখন আর দোকান করেন না। ছেলেই সামলায় সব।আর উনি সবার সাথে তর্ক করে যান কেন মাইকেল রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় কবি বলে।গ্রামের সবাই আড়ালে ডাকে "মিষ্টি মাইকেল" বলে।ছেলে বুড়ো যেই পারে ভদ্রলোককে এ নামে রাগায়।একটু আগে স্কুলের ক'টা ছেলে এই কান্ডটি ঘটানোর ফলাফল আপাতত ভদ্রলোককে ব্রিটিশ অনুরাগী করে তুলেছে--- বুঝলাম।"...বুঝলেন মাস্টার মশাই,এই হল মানুষের জন্মবৃত্তান্ত... পুরাণ বলুন বা বেদ...এই থিয়োরি সায়েন্সও মেনে নিয়েছে...",ভূবন বাবু বলেই চলেছেন।শেষ কথাগুলো কানে আসতেই আরেক দিনের কথা মনে পড়ে গেল।সন্ধ্যাবেলা মেসের খাওয়ার ঘরে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছি।হঠাৎ দেখি এক বয়স্ক ভদ্রলোক লুঙ্গী, পাঞ্জাবি আর ফেজ্ পরে দরজার কাছ থেকে খেলা দেখছেন।চিনি এনাকে... মানে যাতায়াতের পথে অনেকবার দেখেছি।মুদি দোকানি মজনু দার বাবা।ভদ্রলোক কানে কম শোনেন।"মাস্টার... বল খেলা দেখছ...",বলতেই ইশারা ডেকে চেয়ার টেনে বসতে দিলাম।টিভির দিকে তাকিয়ে খেলা দেখতে দেখতে দেখলাম ওনার চোখ জ্বলজ্বল করছে।বিড়বিড় করে বলছেন,"এখন আর বল খেলা।আমাদের সময় এ গাঁ ও গাঁ... বল খেলার যা ধুম ছিল... এখনকার ছেলেপুলেদের সে খ্যামতাও নেই...আর সে দিল্ও নেই।"আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন, "আচ্ছা!মাস্টার, তুমি তো অনেক পড়াশোনা করেছ, বল তো দেখ যখন আমরা জন্মাই তখন কি হয়ে জন্মাই?"।যে উত্তরটা পেলে উনি খুশি হতেন জানা ছিল সেটা।কিন্তু একটু মজা করেই উত্তর দিলাম "মানুষ"।প্রথমবার শুনতে না পাওয়ায় আবার বললাম উত্তরটি।"কি?...মানুষ?... তুমি মাস্টার খুব চালাক।"---বলে হেসে উঠলেন সেই বৃদ্ধ।তার হাসি,ভুবনবাবুর কন্ঠ,মাইকেলের আবৃত্তি... বৃত্ত ক্রমশ বাড়ছে...এক স্রোতে মিশছে আরেক স্রোত... বাসি লবানের দেশ ক্রমশ নিজের করে নিচ্ছে বহিরাগত মানুষকে।কথা গল্প হয়ে উঠছে...বেড়া ভাঙছে এ ওর... আর কদিনের মধ্যেই নবান্ন..."লবান"আসছে নতুন জোয়ার নিয়ে...

                  (ক্রমশ)

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0


বৃত্তের বাইরে (BRITTER BAIRE)

বৃত্তের বাইরে
সুদীপ ব্যানার্জী

স্টেশনের এদিকটাতে চট্ করে কেউ আসে না।প্ল্যাটফর্ম শেষ হতে না হতেই লাইন দুটোর চারপাশে অন্ধকার। টয়লেটের দূর্গন্ধ পেরিয়ে ঝোপঝাড় আর কিছু শ্যাওড়া গাছের ছায়া নিয়ে জায়গাটির দুর্নাম অনেকদিনের।
          সিগনাল পোস্টের আগে এই গা ছমছমে পরিবেশ!বেশ এনজয় করছি একাকীত্বকে।এই যে জনবহুল স্টেশনের এতো কাছে আমি "নেই"হয়ে গেছি,ভেবে বেশ আনন্দ হল।আসলে বরাবরই আমি একটু চুপচাপ, পালানো গোছের। ক্লাস নাইনে জ্যামিতি ক্লাসে কম্পাস নিয়ে বৃত্ত আঁকতে গিয়ে প্রথম রিয়েলাইজ করি ব্যাপারটা।যেখানেই ঘটনার সূত্রপাত, আমি পত্রপাঠ কম্পাসের আওতার বাইরে।হঠাৎ মনে পড়ে গেল মলয় স্যারের হাতের কাঠের জ্যামিতি বক্স।না,ঐ বড় কম্পাসের র‍্যাডারও ক্যাচ করতে পারে নি আমায়।এই যে যা ঘটছে, সেখান থেকে আমি বেরিয়ে গেলাম,আর মঞ্চে প্রবেশ করল কুশীলবেরা একে একে,আমি তখন নিবিষ্ট চিত্তে দর্শক আসন গরম করছি,প্রতিটি মুভমেন্টের নোট রাখছি।এ অভ্যাস বেশ রপ্ত করেছি। এখন যে মেয়েটি ১নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছে ঘণ ঘণ,ও কি জানে ওর মুখের দুশ্চিন্তার ছাপ অনেকটা প্লাস্টারওঠা হলুদ দেওয়ালের মতো।ও কি বুঝতে পারছে আমি ওর মোবাইলের দাম আন্দাজ করছি আর ভাবছি মেয়েটা এতো টাকা পেলো কোথায়?ও কি জানে ওর পাশে বেঞ্চে বসে থাকা টেকোটা ঘুমে ঢুললেও চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে ওর শরীরে? এ সব বৃত্তের বাইরে না গেলে জানতে পারতাম কি?স্থান মাহাত্ম্য কি না জানি না,আমি যেন দিব্য দৃষ্টি পেয়েছি। খুব হাসি পাচ্ছে।যে আমি কিনা চিরকাল ঘটনার সেন্ট্রাল স্টেজ ক্যানো,বাউন্ডারি লাইনেও দাঁড়াইনি কোন দিন,দেখতে পাচ্ছি --সেই আমাকেই স্ট্রেচারে করে চারজন লাল জামা পরা লোক নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার এই জায়গাটা থেকে।

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

Boishakhi Dupure

বৈশাখি দুপুরে
সুদীপ ব্যানার্জী

নীরবে থাকি বেমানান পাখিডানা,সরু ঠোঁটে...
ক্লান্ত। দুপুরের রোদ খুঁটে খুঁটে।

জিভের আর্দ্রতা শুষে নিল নৈশব্দ
বৈশাখী শুকনোয়...

তবু বুনে চলা পোশাকি ফসল।
হৃদয়ের গান ফোঁটা ফোঁটা...
ছিটে আয় স্মৃতি থেকে শিশু আম
বিকেলের ধুলো মাখা ঝড়ে।

বেশ প্রিয় খেলা এখন... একলা বাড়ার সময়
গোছানো মাঝারি স্যুটকেসে...
দুপুরে ঢিল ছুঁড়ে গাছে
ডেকে নেবো সব বুড়ো বন্ধুদের...

ঝিমমারা পাড়াগাঁ। কেউ নেই...
ছেলেবেলা খুব আজ শহুরে
কাঁচামিঠা আমপোড়া প্যাকেটে...

ঘামভেজা কলারে দাগ নেই ময়লার...

তিনটি লেখা...