উল্টে যাওয়ার কিস্যা [ulte jaoar kissa]



             উল্টে যাওয়ার কিস্যা... 

                    সুদীপ ব্যানার্জী







         দুপুরের আয়োজন নামলে এপার থেকে কেমন ঝরে পড়ে ক্যালাইডোস্কোপিক ঝরণার সাথে অফিস,স্কুলবাস,পাঁচতলা শপিং মল ...আইনক্সের ২২ ডিগ্রির আদর।এই যে উল্টে যাওয়া --- বেলা শেষ হওয়ার দিকে ঝুঁকতেই এই যে ছায়া শুরুর আগেই কালারফুল হওয়া---- চাওয়াপাওয়ার পাতি সূর্যমুখীর প্রমোদিয়া খাটি ভেষজ বর্ণালীর বে-নী-আ-স-হ-ক-লার জামদানি ---চোখ নিশপিশ দূরত্বে খানিকটা খামচে নেওয়া আলো  এ ,বেঁচেবর্তে  থাকার গা বাঁচানো আমোদ---- গৃহবাসীর অকাতর এপেটাইট।



    আপাতত মোমবাতি কিনছে জোনাকীর দল ...পশ্চিমে ডুব মেরেছে যেটা আপাত দৃষ্টিতে তাকে স্বচ্ছতা মনে হতেই পারে...তবু  অলৌকিক আলো অন হয়  এসময়..

      মশালের গল্প বলছিনা... অলিম্পিক কুলীন ...ছুটে চলে পেশীবহুল প্লেয়ারি জোয়ারে...জ্বলে ওঠে গর্বের সিক্যুয়ালে...ফেলে আসা বিদ্রোহী গন্ধটি প্রেডিকেট...ওয়াইল্ড-স্টোনের ম্যাচো লুক ... অপরূপ তান ইহজীবনের।তাই সিনোরিটা,গীতা কি সৌগন্ধ, দহলিজে যে প্রদীপের তাপ নিতে ছুটে আসতো রেভোলিউশন,ইলিউশন ,শ্যামাপোকা... আজ হোথা এ ল ই ডি জ্বেলেছি যত্নের ...পরপুরুষের রুমালের মতো দিবানা...

         ফুটপাথে মিছিল...একদল প্রগতির সন্তান...দাও ফিরে সে অরণ্যের স্লোগান ...ঝটিতি শেয়ারে কেয়ারি করা বেগনভোলিয়াঘেরা রিসর্টের ফোমমাখা নরম আদরের চেয়েও সোহাগি...কস্টলি...মোমবাতির দাম তবু বাড়েনা...প্রতিবাদী দামী হাত...ম্যানিকিওর প্যাডিকিওরের মতো ঝকঝকে...দরদামে ঠকেনা...

       রাত গ্রীষ্মের ...গভীর মশারি অন্ধকার...পাতলা সচেতন ফ্যানের ব্লেডে ধাক্কা খেয়ে জ্বলছে  নিভছে রুফটপ...জোনাকির কাটা লাশ...সবুজাভ আলো ওড়বার...





google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

ইচ্ছে করে একটা দিন কাটাই কবির সাথে (icchhe kore ekta din katai kobir sathe)





ইচ্ছে করে একটা দিন কাটাই কবির সাথে
----------------------------------------------------------
সুদীপ ব্যানার্জী

চিত্র ঋণ  - ঐশ্বর্য কর





 ইচ্ছে করে সারাটা দিন কাটাবো এক কবির সাথে।কবিতার সাথে দিন কাটাচ্ছি ...তা প্রায় কথা শেখার শুরুর দিন ইস্তক...  চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার ... পাতা উল্টোই সুর্য ডোবাওঠার  সাথেই...

                             #

যেদিন অতীত ,বর্তমান বা ভবিষ্যত উস্কে দেয় কল্পনার সিঁদুরকৌ্টো...ছন্দ অপছন্দের গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে শব্দের সাথে ... আন্দাজে এক কবির ছবি ভেসে ওঠে  ভাঙাচোরা মনদালানে.. কিন্তু .ছুঁতে পারিনা...

                            #






     এই সেদিনও  সামনের বাড়ির গাছে এক ছোট ,নীলচে পাখি দেখতাম।রোদের গতর বাড়ন্ত হওয়ার আগে কী আশ্চর্য সুরে ডেকে উঠতো সে।প্রথম প্রথম ভাবতাম কবি বোধহয় এরমই।দিনের আলোর যৌবন আর তার রোমাঞ্চের  মাঝে একটুকরো অবাক  নিঃশ্বাস জীবিতের...।সারাদিন কাটিয়েছি ওকে দেখে।দিনের শেষে ওও তো ফিরে গেল বাড়ি।কবির  বাড়ি হয়?ঈশ্বরের বাড়ি লাগে ...কিন্তু কবি বাড়ি ফিরে গেলে রাত কাটবে কিসের ছটায়? ...

                          #

যে কবিতার পাশে রোজ শুই ,ঘুমাই ,প্রশ্ন করি তাকে ,'তোমার সেই কবি মানুষটি কেমন?না কি মানুষই নয়?'...সে উত্তর দেয়না ...মুচকে হেসে ওঠে...সে হাসি হাজার চুনির রহস্য...পান্নার সবুজাভ রাতবাতি...মাঝে মাঝে কবিতা আড় ভাঙে ...সে আড় ভাঙা সদ্যোজাত শিশুর চোখ  চাওয়া,বিশুদ্ধ..










                       #

 মাঝে মাঝে চঞ্চল কবিতা টুকটুকে ঠোঁট কামড়ে উজাড় করে নদীর সব ঢেউ...সাক্ষাত ভেনাস ...অভিমানী সুর 'এতো প্রশ্ন কেন?তুমি কী কিছুই বোঝনা?'...এ হেঁয়ালির আর উত্তর দিই কী?তখন যে প্রতিটি লাইন ধরে কবিকে খুঁজছি..।

                         #

এই জার্নিতে কবিতা ধরা দিচ্ছে...একেকটা অক্ষর মিশে যাচ্ছে চামড়ার প্রতিটি রোঁয়ায়...তবু  কবিকে পাচ্ছিনা।জানিস,খুব ইচ্ছে করে একটা গোটা দিন কাটাই কবির সাথে...


                                 



সুদীপ ব্যানার্জী

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

উইন্ডোশপিং --- window-shopping [a bengali prose]

 

                                  উইন্ডোশপিং

                                       *******************************

   


          কিছুদিন হল বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।অনেকটা সেই শীত ডিসেম্বরের মেঘলা ছেলেবেলা... মালভূমির কুয়াশায় সাততাড়াতাড়ি  কম্বলজড়ানো আদর... ঘরোয়া ওমের আরামের মতো।আদরের কথা উঠলো যখন তখন একটু হাসি মাখামাখি... চুমু খাওয়া খাওয়ি --- ওয়েদারকে ব্লেম করে ,উষ্ণ হয়ে সাবালক হয়ে ওঠার গল্প--- এসব তো আসবেই... অফিস ছুটির মতোই... সন্ধ্যে হলেই।


                   এখন এই অন্ধকারে,এখন এই ত্রিফলা আলোয়,এখন মলের ঝলমলে,কফিশপের আলতো সিপে,নন্দনের  উদ্বোধনে, দেখার কার্টেন রেইসারে ---হাওয়া মেখে বেচে যাওয়া চাখি বেড়ে ওঠা শরতের কাশ,বসন্তের লালচে পলাশ...ডিসেম্বরের  টোবা টোবা চেরী...অঞ্জনের বো-ব্যারাক...স্বপ্নের উইন্ডোশপিং... গালগল্পের মতো ট্যুর অফা্রের...



                  টিভি চালাতেই প্রিয় সিরিয়ালে দুইজোড়া চোখ...স্ক্রিনে আমাদের শুভ দৃষ্টি... ম্যালের উলটো দিকে নির্জনে হাত ধরাধরি ...  পাশে উচ্চতা চাহিদার চেয়েও বিশাল -- আরেকদিকে খাদ---গভীর ... অস্তিত্বের মাপকাঠি --- নেমে গেছে সমতল ছাড়িয়ে বদ্বীপের সীমাবদ্ধ তেকোনা সোসাইটির নির্লোম বাহুমূল অব্দি।আস্তে চেপে ধরছি  হাত... আলগাই...তবু এখনও ছুঁয়ে আছো সেই সেলফির মতো--- এখনও যার প্রিন্ট নেওয়া হয়নি।আলসেমি বলতে পারো...আসলে টাটকা ঐ অনুভূতি ডিলিট করতে চায়নি। পাহাড়,মাঝে বাগান...ফুল ফুটেছে অচেনা গন্ধ আর রঙের জীবন্ত মোজাইকে...ব্যাকগ্রাউন্ডে নেপালি গান আর বাঁশি ...বড্ড বেমানান আমরা ক্যাজুয়াল মিডলক্লাস দম্পতি...সেই অচেনা জোড়ায় জোড়ায় একাকীত্ব,একপাশে মাঝবয়সী কাপল কলকাতার...লন্ডনের বা সিনসিনাটির ...জানিনা ...ইন্টারন্যাশানাল...আরেকপাশে কলেজকাটা কিশোর-কিশোরী...চ্যাপ্টা নাক...ফর্সা লালচে গাল...আমাদের প্রতিচ্ছবি --- একটু শর্ট...সাইজে...এই যা।চেনা চৌহদ্দির চেয়ে ঐ পাহাড়িয়া সময়কেই চিনতে পারা সহজ --- নিজেদের মতো করে ।কানে সেই প্রিয় গান -- 'প্রাণ ভরিয়ে,তৃষা হরিয়ে...মোরে আরও আরও দাও প্রাণ'...প্রিয় গায়িকার কন্ঠ...

       আবার বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছে জাগছে ...মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আবার ঘুমিয়ে যাওয়ার মতো...

     google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0     

গন্ধগোকুল (GONDHO GOKUL - A BENGALI SHORT STORY)





গন্ধগোকুল


সুদীপ ব্যানার্জী










ভাবছিলাম রাস্তার ওপারের বাড়িটির কথা।এই নয় যে আজই প্রথম চোখে পড়লো।রোজই জানলার দিকে তাকালে ঐ ফ্যাকাশে দেওয়াল আর জানলার ধুয়ে যাওয়া শ্যাওলাটে পাল্লাগুলো স্থিরচিত্রের মতো তাকিয়ে থাকে।আমারই দেখা হয়নি হয়তো।এ পাড়ায় দুমাস হল।বেলঘরিয়ার এদিকটা এখনও পুরোদস্তুর শহর হয়ে ওঠেনি।কালীতলা বাজার ছাড়িয়ে একটু এগোলেই পুকুরের পর পুকুর।নারকেল গাছের সারি।বড্ড ঘিঞ্জি এলাকা।সরু সিমেন্টের রাস্তা ধরে এগোলেই ঝকঝকে দিল্লীরোড।একটু হেঁটে গেলেই মাটির স্লোপ,শর্টকাটে বরাহনগর স্টেশণ।আর নীচে নামলেই ব্যস্ত ডানলপ ।একদম আলাদা ।এই কন্ট্রাস্ট ---কেন জানিনা নেশা জাগায়।ঠিক এই মুহূর্তে যেমন জানলার ডানদিকের নতুন হাইরাইজের ওয়েদারকোটের গন্ধ আর ফ্যাকাশে বাড়িটার বুনো গন্ধ কেমন ধোঁয়াটে করে দিচ্ছে চিন্তাভাবনার রোজকার সাধারণ গতিকে।মিলি বলতো , 'ভালবাসার মানুষের গায়ের গন্ধ  চোখ বুজলেই চেনা যায় '।খুব হেসেছিলাম ওর ঘ্রাণশক্তির গল্প শুনে।রাস্তার পাশে দেশি কুকুরের বাচ্চাটা ডাস্টবিনের কাছে কি একটা করছিলো।জানলায় আমাকে দেখে, কি জানে কেন,এসে তাকাচ্ছে আমার দিকে।আমি কিন্তু কুকুর একদম পছন্দ করিনা।


    ইদানিং প্রায়ই গন্ধটা আমি পাচ্ছি।বিশেষ করে অফিস বেরোনোর আগে আর অফিস থেকে ফিরে ফেসবুক খুটুর খুটুর করতে গিয়ে।বুনো,শ্যাওলাটে -- কিন্তু বেশ চেনা।এক কলিগকে বলতেই একচোট হেসে ,ইনিয়ে বিনিয়ে যা বললো তার সারার্থ --ইমিডিয়েট বিয়ে না করলে এ ব্যধি বাড়বে ।মিলিকে বলেছি কথাটা --- প্যাকেটের শেষ বাদামের টুকরো মুখে ফেলে ও হেসে গভীর ভাবে তাকালো আমার দিকে।তারপর বালিব্রিজের আলোগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো গম্ভীরভাবে।আবার আমি সেই বুনো,শ্যাওলাটে গন্ধে বুঁদ হয়ে গেলাম।




   জানলার দিকে আজ ছুটে যেতে হল। যদিও ঘড়িতে ৯টা ১০।সকালে মিলি কল করেছে।তারপর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে এপাশ ওপাশ করতেই স্নানের সময়।জামা পরে বডি-স্প্রে লাগাতো যাবো ,খেয়াল পড়লো --- আজ সকাল থেকেই বুনো,শ্যাওলাটে গন্ধ আর পাচ্ছি না।জানলার কাছে ছুটলাম।আরে...কারা যেন বাড়িটার গায়ে বাঁশের ভাড়া লাগিয়ে দেওয়াল ঘষাঘষি ,মোছামোছি করছে...এক বয়স্ক ভদ্রলোক নির্দেশ দিচ্ছেন কয়েকজনকে...পাশে ওয়েদার কোটের বালতি।আর দাঁড়ালাম না।অফিস থেকে ফিরে মিলিদের বাড়ি যেতে হবে...মিলির মা আজ ডিনারে ডেকেছেন...

     


   

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

      

তিনটি লেখা...