আদ্রার মহালয়া

  
  ভোরবেলায় শব্দবাজী আর  রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডিপাঠ গড়পড়তা বাঙালির গতানুগতিক মহালয়ার নস্টালজিয়া। রেল শহর আদ্রার শারদ সকালেও  এই তো সেদিনও মহালয়া নেমে আসতো ডি.এস.টুফর্টি টু বাই সি তে।আমাদের বাড়ির  পরিচয় ছিল এই নম্বরটাই। বাল্যবন্ধু, সহপাঠী শাশ্বত'র কাছে শুনেছি সেই বাড়ি আর নেই।এক জীবনে মানুষের যে ক'টা বাড়ি বাড়ি হয়ে ওঠে!
      যাক্।মহালয়ায় ফিরে যাই...তো মহালয়ার ভোর আমাদের ওখানেও আর চার -পাঁচটা জায়গার মতোই তবুও কতোই না মৌলিক,কতোই না আপন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ট্রেনের সাইরেন... মহালয়ার ভোর নামছে  "বাজল তোমার আলোর বেণু" উচ্চারণের অবকাশে ট্রেন ছাড়ার হুইসল... নতুন শুরুকে এ ভাবে স্বাগত জানানো হয় আর কোথায়?এরপর যদি বলি, পৌনে পাঁচটা নাগাদ চণ্ডীমন্ত্র আর অদূরের মসজিদের আজান মিলেমিশে ডি-এস টু ফর্টি টু'র এক বালকের মনে যে অনুরণন তৈরী করত একতার... তারই সুর ছুঁয়ে আজও বেঁচে আছি---তাহলে খুব ভুল বলা হবে না।
      আজও মহালয়া আসে...মহালয়া যায়...কিন্তু রেখাপাত করে না।কি জানি সেই পরিবেশটা পাই না বলেই এটা হয় না কি!
           সেই ছোটবেলায় রোমাঞ্চিত আমি, বুকের ভেতর কেমন কেমন আনন্দ নিয়ে এখনও জেগে উঠতে চাই...সামনের মাঠ,নর্থ হেলথ সেন্টার,প্রাইমারী স্কুল ছাড়িয়ে...এখনও কি তেমনই মহালয়া নামে?মিলিয়ে নেওয়ার ফুরসত মেলে না!
         বেনিয়াশোল পেরিয়ে রঘুনাথপুরের দিকের শ্মশাণে শুয়ে থাকা আমার  মা ---আদ্রা থেকে উঠে এসে মহালয়ার ভোরে কপালে হাত বুলিয়ে দেবে মিষ্টি করে, ঘুম ভাঙিয়ে বলবে,"সুমন,ওঠ...রেডিওতে মহালয়া শুরু হচ্ছে"...এ স্বপ্নটি প্রায়ই দেখি...জানি ভোরে দেখা স্বপ্নও সত্যি হয় না...
        কিছু শিউলি ফুলের গন্ধ... আমার গ্রামের বাড়ির ভোরবেলা...আজও আগমনি গান গাইতে গাইতে ভোরবেলা খঞ্জনি বাজিয়ে এক সুমধুর কন্ঠ উমার বাড়ি ফিরে আসার গান গেয়ে যায়।আদ্রার সেই মহালয়া আর আসে না....

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

তিনটি লেখা...