হাইওয়ের গানগুলি (highwayer ganguli)

হাইওয়ের গানগুলি ----------*-**-----
.      (১) সহজ নয় হাইওয়ে বরাবর লিখে চলা তন্দুর থেকে শিকে গেঁথে তুলে ফ্যালা রুটির গল্প পোড়াদাগগুলো থেকে খুঁটে নেওয়া চিহ্ন ফেলে দেওয়া বেশী বেশী ভালবাসাবাসির অপরাধ ডিভাইডারে রক্তের দাগ অ্যাক্সিডেন্টের গূঢ় অর্থ শিখছে
   (২) খবর হতে চেয়েছে  যবে থেকে পেপার পড়া ছেড়েছে পেট্রোলপাম্পের পাশের পাড়া তেল-ডিজেলের গন্ধ থামিয়ে ওখানে এখন জুঁই শালীন অশালীন মেঘ হেডলাইটে পূর্ণিমা নামছে থেমে থেমে এরম্ প্রান্তরেই উর্বশী নামে টোলট্যাক্স নিমগ্ন তখনও খুচরো ইশ্বর সন্ধানে ধাবার খাটিয়ায় দেশওয়ালি হাভেলি আজকাল পেট্রোলপাম্পের পাশের পাড়া    এসব খবরই রাখে
ইচ্ছেকথার খোলা ডায়েরি ------------------------------------         (১) ছিঁড়ে দিচ্ছো তো রোজ প্রতিবাদী নুনছাল না হয় গুটিয়েই নিলাম চুপচাপ মেনে শর্ত মাথাতোলার গল্প আরেকটু বুড়ো হোক দেওয়াল লিখনে বুলিয়ে দেবো ঘাটতির ক্যালসিয়াম বল ডাক করতে টেকনিক লাগছে না
    (২) খাড়া পাহাড় বুড়ো হচ্ছে ঘণ ডালপালা।ধুলোয় ভারি পাতার ইচ্ছেরা সরু রাস্তাটি চওড়া হচ্ছে আরও রোদ পড়ে সিঁথি আজও লাল সময়ের সাথে সাথে শুধু কিছু বৃষ্টি ঝরে গ্যাছে     (৩) লম্বা উঁচু টাওয়ারগুলো নিঃশব্দে পেরিয়ে যাব ঝুঁকে যাক রোমান্টিক ব্রিজ মেঘ ছুঁয়ে ফেললো অফুরন্ত বিল্ডিং শুচিবায়ুগ্রস্ত ছায়াপথে এইবার সন্ধ্যাতারা জ্বলুক
                  (৪) কান্না আসে না মৃত্যু শুনতে পেয়ে সল্টেড বাদাম চিবোই একটার পর একটা বেঁচে থাকা মানে এই দানাদানা,মসলাই.... বুকে ছাপা সময়ের লোগো ---"ক্রুকড"।    (৫) ক'টা বাজছে সোনা? বিছানায় মেরুদন্ড ছাড়লাম বেশ হাল্কা লাগছে এ লুঙ্গি ছেড়ে... তোমার দেওয়া পতাকাই লজ্জাবস্ত্র আমার পাব্লিক আর "ব্যাঁকা মদনা" বলছে না


 সুদীপ ব্যানার্জী

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

না বুঝলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে-৩(na bujhle kortipokkho dayi nohe-3)

না বুঝলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে (৩) °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বন্ধুবেলায় পাহাড়ের টান।অথচ মন-ক্যামেরায় গুছিয়ে আজকাল রিল ভরার দিন নেই।হ্যান্ডিক্যাম হাতে দুনিয়া তুলছো মুঠো মুঠো, আর আমার তখন কাঁটা ফোঁটার সময়। এ হাতে স্বল্পমেধারেখা আর ঐ হাতে কড়া পড়তে পড়তে স্বপ্নের মাঝেই দোষ কাটাই যাবতীয় বকওয়াসের । বাস্তবের ট্রিলজি পড়তে পড়তে বাসের কন্ডাকটর টিকেট ধরিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে স্থিতি গতির অদ্ভুদ মিস্ট্রির ভিড়করা লেন বাইলেনে জড়ো থতমত  প্যাসেঞ্জারদের। ঝুলে থাকতে থাকতে মহানাগরিক ব্যস্ততার মাঝে লুপহোল দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে দুপুরের শেষাংশ। উপসংহার লিখছি আর লিক করা হাওয়া চুপসে দিলো বাহারি বেলুনের রূপকথা। শুয়ে পড়েছি পাথুরে মাটিতে,সমুদ্র শেখাচ্ছে  ফোটো তোলার অ- আ, বেরো পাহাড়ের গুহার কাছের মন্দিরের ভেতর থেকে ছোটগল্পের মতো বেরিয়ে আসছে এক সাধু। ক্লিক।ক্লিক।ক্লিক।সে ক্যামেরায় তোলা ছবি সাঁতার জানে না।হাঁটতে হাঁটতে বানিয়ে নিলাম নিজেরাই একটা গোটা রেল স্টেশন।
তারপর কতো নতুন রিল এলো,গ্যালো।এখন ডি.এস.এল.আর. । ছবি তুলছি খচাখচ্।পেরিয়ে যাওয়া টাইগারহিলে রঙ বুলোচ্ছি আপামর জনতার চাহিদা দিয়ে।একটা পাহাড়ে হাত বুলিয়ে দেখে নিচ্ছি উচ্চতার কমনীয়তা।একঘর কিছু স্ন্যাপশট জড়ো করেছি জিন্সের সাইডপকেটে। ডানা গজালে সুযোগ মতো উড়িয়ে দেবো একটার পর একটা...
               সুদীপ ব্যানার্জী


google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

না বুঝলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে -২
----------------------------------------------


এরপর দিগন্তের দিকে চেয়ে আছি প্যাটপ্যাট। ঘুম থেকে উঠলেই হ্যাংলার মতো চোখ কচলে সকালের সংবাদ বাসি প্যাটিস এর চেয়ে মুচমুচে হয়ে জিভে এসে ঠিকরোয় পরকীয়া কটাক্ষে।ডলারের সাথে কোস্তাকুস্তিতে রূপীর চিত পটাং রোজ দেখতে দেখতে আমি ঠাকুরের গান শুনি। পাশের বাড়িতে তখন রাশিদ খান... মিয়া মল্লার!এও এক ওভারস্টেপিং কল্পনার।ছায়ার তলায় মাদুর বিছিয়ে আলফাল খেলাগুলোকে যে কি আনরোমান্টিক লাগে। রূপকথাগুলো একটা সময়ের পর সব লাভস্টোরি হয়ে যায়।আর তারপর সবার মতোই  এ্যানিমেটেড ক্যারেকটার  ছেলেভোলানো আতসবাজি।

এসব ছেড়ে আপাতত মন দিয়েছি আমাজনি অফারে।হাত ডোবালে পিরানহার এক খাবলে লা-পতা মাংসের আশংকাকে লোয়ার মিডল ক্লাস সেফগার্ড ভাবলে,অবগাহনকে সোশাল ডিস-অর্ডারের গ্রুমিংগ্রাউন্ড ভেবে সাধারনকে অসাধারন মার্কেটিংজাত কুলীন ঠাওরে হেই একডা পেন্নাম ছুঁড়ে দিলাম।মিনিমাম মস্তিষ্কে ম্যাক্সিমাম লোড নিয়ে শুরু আরেকটা পিছলে যাওয়ার দিন।আমার পনিটেইল যেমনি ছিল, তেমনি রবে,শার্ট ভেজাবো না।


সুদীপ ব্যানার্জী

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

না বুঝলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে -১ (na bujhle kortripokkho dayI nohe-(1)

না বুঝলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে (১)
-----_---------   --------- --------------
সুদীপ ব্যানার্জী


এবার তো বলতেই হবে নালঝোল মাখা ইতিহাস ইতিহাস গল্প।গল্পের সেই সাঁতার কাটার (গ,ল,প এর) ঐতিহ্যকে পেরিয়ে তীরে উঠে দম নিচ্ছি বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো।তা যাক। কে আর ঘড়ির কাঁটা ধরে পালানোর অঙ্ক শেখে।অঙ্কের কথা বললেই বুক কেমন পিলপিল করে না!এ শালা এক অভ্যাস! অনেকটা তারকাটা দাম্পত্যের মতোই।মিঁইয়ে এসেছে মসলামুড়ি অথচ কুচো নারকোল তখনও কচি।এ অবস্থায় পড়লে কিছুটা কান
খোঁটার পর কোবতে আসে।বুকের ভেতর কি সাঁইসাঁই! কিন্তু দাদা এ হাড়গোড় কটা ঠোকাঠুকি লাগলে "সা" বেরোয় না...শুধুই খট।এই বেসুরো খটে বোল ফোটাবেন কী,কম্পাঙ্কেই ক্যাল্কুলেসন থুবড়ে পড়বে দেওয়ালে।অতঃ কিম্? মাথাগজানোর ছড়া --


    আসলে এই লেখা না লেখার মাঝের অবস্থানটিই মাথাগজানোর মাঝের গ্যাপ।সাপুড়ের ছড়ার মতো কিছু একটা কানের কাছে,মনের পাশে ভিনভিন করতে করতে কখন যে সেঁধিয়ে যায় দিল্ কি দহলিজকে উস পার --- মেহনতি মানুষ সে খবর রাখে না।সাপ আর বেজির লড়াইয়ে যদি রিফ্লেক্স জেতে ভাবেন, আপনি অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের তত্ব ছেড়ে দৈনিক সংখ্যাতত্ব ঘাঁটুন...আয়েগা...ও আয়েগা...আরে মশাই একটা উইলিং সাস্পেন্স অফ ডিসবিলিফ না থাকলে কোলরিজ আর কোলগেট...দাঁত বের করে বোঝা না বোঝার মাঝের ভান হয়ে 'আমি'র মতো গুলিয়ে দিতো ভোরবেলার ঝিকিমিকিকে টুনিবালবের লুম্পেনগিরির সাথে।

৷৷৷   (চলবে/নাও চলতে পারে)৷।।

 ©সুদীপ ব্যানার্জী

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

দু-চুমুক কবিতাই হয়ে যাক (DU CHUMUK KOBITAI HOYE JAK)


দুচুমুক কবিতাই হয়ে যাক





           প্রতিশ্রুতি তোমাকে

         

     নিরীহ প্রশ্নে যন্ত্রণা পেতে ভাল লাগছে

     আসলে ওদের মতো করে ভাববো,
     খুব রোদে পোড়া ত্বক কালো করে,
     চুমু খাব শুকনো সর্দি,ময়লা জমা গালে --
      এ ছবি সিলমোহর হয়,
     ছড়িয়ে পড়ে সাদা পায়রা ওড়ানো উদ্বোধনে...

খাঁচা থেকে বেরিয়ে সব ভুলে যাই
যে ব্যথার কথা তুমি বললে
গতজন্মের গল্পের চেয়েও সুন্দর সে বিলাস!

আদতে এরা বিব্রত করে না...





কবিতা ঈশ্বরীকে



নি:স্ব আলোতে ভাসা
আধাবুলি শিশুখেলা
অভিমানীনী ঈশ্বরী
আধ্যাত্মিক পরোয়ানায়
মুক্তি আনাও আবার...

সুরঞ্জনা, তুমি চেনা বিছানায়
ঠিকানা লিখে দাও "অবন্তীনগর"
পরিচয় ঘেঁটে ঘুঁটে উলু,মোমবাতির আদলে
মিনার উঠুক মাথা তুলে...

মন্ত্রের শব্দ বিঞ্জান হলে'
দু'টো জবা ফোটে পদতলে...

সুরঞ্জনা, তুমি মুঠো ভরা হাত ছেড়ে দিও না...

সকাল নিভে গেছে
ফুলকির সন্ধানী আগুনে ঝলসে...
আনাগোনা খোলা জানলার কপাটে
দোলে না দোলে না চোখ ঋতুবন্ধে...

এ মেট্রোতে সব শহুরে পাখালি

পালক খুলে মূর্তি হও চিরদিন...

আলোর ভাষা শিখে, গাও গোত্রহীন দেবীখেলা...

সুরঞ্জনা, যুবকের হাত ছেড়ে দিও না...


সুদীপ ব্যানার্জী

contact- sudip

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

ওবিচুয়ারি টু বেঁচে থাকা (Obituary to Benche Thaka)


ওবিচুয়ারি টু বেঁচে থাকা
--------------------------------------

সুদীপ ব্যানার্জী

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>


   

  •                                || এক ||

এখানে আমরা কাঁদতেই এসেছি।ফাঁসির দাবিতে নয়।সে কোন পাতালিক উপপাতালিক স্মৃতিস্তরে লেপ্টে আছে রোজকার আঁচ বাঁচিয়ে।নিষ্কাশন যন্ত্র চলছে বিবেকের ফোঁটা আঁকা চন্দনছবিতে।

খুব শিশু কিছু মুখ ঘিরে ধরছে আধুনিক স্টেইনগান।পোয়াটাক্ প্রাচীন ঘি মাখছি শরীরে।চেনা ছবিতে ফ্ল্যাশ্ অনভ্যাসে।এই প্রক্রিয়ায় বাপকে পুড়িয়েছি।মায়ের মৃতদেহ সঁপে দিয়েছিকাঠকয়লার ছায়াতে।আর ঐ শিশুগুলো শুধুই ছবি মিডিয়ার।সিরিয়া বলতে পারো।সন্তোষপুরও।আমি জিভ কাটছি ঐদিকে তাকিয়ে ফেলায়।


              || দুই||

নদীর ভাঙন রুখতে একজীবন বালির বস্তা বুঝি।ভাঙছে এপার।বাড়ছে ওপার।তুমি মূর্তিভাঙার লজ্জা ঢাকছ,আমি নদীর।কাচের চুড়ি ভাঙলে হাত কাটে,রক্ত ঝরে।এতে চমকানোর কিছু নেই সোনা।সেক্সি ছবি।ভগবান হতে হতে রাজা ধুলো হয় আর ধুলো রাজা হয়ে দেহজ আদল টাঙিয়ে সিনা উঁচু করে দাঁড়ায়।প্রতিক্রিয়ারূপ এ গতিসূত্র তো দৈনিক লালাঝরা সোপ্ অপেরা।

                          ||তিন||

           দরিয়ায় কেও মেঘ কি দেখে নি?
              তুফান পাড়ি সকালজোড়া?

               মাছের চোখে লক্ষ্য স্থির।
              পলক পড়েছে একবারই।

             সমান্তরালে ভাসছে যা--- আমার না!
              নিখুঁত আড়াল ঢাকছে গা।
       
              উদোম যদি ঢেউয়ের কাঁপন,
              আপন তবে হাওয়ার নাচন।
              স্রোতের পাশে স্রোতের মা--
               জলছবিরা হেঁটে যা।
 
               দরিয়াজুড়ে উড়ছে পাখি।
                জীবন মানে ঢেকে রাখি।

নৌকা চলে যাওয়ার ছলে,মাছ গেঁথেছে পূর্বদিক।
তলিয়ে গেলে দাওয়ার তলে,শূণ্য লাগে দিগ্বিদিক।।

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

                         || চার ||

জটিল ম্যাপ খুলে অবস্থান চিহ্নিত করতে ভালই লাগে। নির্ভাঁজ বিছানায় একলাটে আঁকিবুকি।জ্যান্তই।দূরে নিভন্ত রাস্তার আলো ভূমিকা ভাবছে।
দিন অথবা, জীবনের।জানি,কিছু কোটেশন পেলে তুমি আজও লিখে রাখতে  ডায়রিতে!পলাশের রঙ যতোটা লাল হ'লে মনে হয় দাবানল,ছোপাতে চাইতে আমার ছবিতে আনকোরা সে অবিকল।বুক থেকে কিছু রক্তের ফোঁটা মিশিয়ে অশ্রুজলে,বিছানায় তুমি কিছু রেখার মোচড়ে তিনদিক জল একদিক স্থল নিয়ে জেগে ওঠো।
ভোর হলে নতুন ভূগোলে মাতবো।

                             || পাঁচ ||

রাত নামুক, হাত ধরবো। চোখে আলো পড়লে কষ্ট হয় আজকাল।সারা সকাল ভরা দুপুর।শেষ হচ্ছে না বিকেল।হাপুস অপেক্ষায় সিগারেট প্যাকেট শেষ।
দস্যিছানা লাফিয়ে বুকের আদর কাড়ে।আছড়ে পড়ে চোখের কোলে নায়াগ্রা। সায়েন্স পড়িনি।মধ্যমেধা প্রতিসরণের সূত্র মানে।সরল রেখায় ভাল কপাল খোলে ।বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত।কম অন্ধকার।কম আলো।
আম্পায়ারদ্বয় হ্যারিকেন জ্বালো।গ্লোরি হ্যালেলুযা।
থার্মোমিটারে মুখ দেখছি।অন্ধ কবিতার আলোয় ছুঁৎমার্গ।দেহবল্লরী রাতেই জাগে।ফুটবল বিশ্বকাপ।ব্রাজিল? না ওজিল?ভার্জিল ওদের বাপ।কেরোসিন রেশনে আর দেবে না।দিনের বেলা মশাল জ্বলে।
প্লাস্টার খসে পড়া শহীদ মিনারে প্রেমপত্র।মোমবাতির আলো কবিতা পাঠের নিষেকে ভূমিষ্ঠ।সঞ্জয় কিছু লাইন লাইভ টেলিকাস্ট কর স্ক্রিনে।জোছনা খায় না রাতে পাখি।হাত ধরেছি মানে অন্য অাধার ছোঁবে না
আঁধার।মানিনা। এ প্রস্তাবনা পাল্টাক।

      ----------------------------------------
head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

এবার তিন (EBAR TIN)


হ্যাংলা
সুদীপ ব্যানার্জী




এই যে আমি দোলাচল ভুলছি
অভ্রের চেয়ে চকচকে কপালে পাউডার বুলোচ্ছি
আর চায়ের এঁটো কাপ থেকে প্রতিফলন সেঁকছি
এসব ইতিহাস শেকড়বাকড় মাদুলি হয়েছে ঘড়িতে

বিফলে টাকা ফেরতের গল্পটা শেষ হয়নি এখনও
আঙ্গুঠাছাপ কাগজ টিপ পরবে
আমার ধ্যাবড়া অস্তিত্বকে স্যালুট করবে

জানেমন এ কোনও নাবালক আবদার নয়
মাঝবয়েসী হ্যাংলামি





   দেওয়াল লিখন কিংবা গ্রাফিটি
-----------------------------------------------------
সুদীপ ব্যানার্জী

বাঁকাট্যারা ইজ্জৎ নিয়ে লোফালুফি

লোপ্পা ক্যাচ কুঁকড়ে মাইরি অবাক দুলহন দেখি

সাপ্টে ধরে থাকি চেকনাই লাগা পেট

সেঁধিয়ে ডার্কনেস ঘেরা চত্বরে সিটি মারছি

উরিব্বাস কিছু তনহা খাল আটকে  উবু বসে

"হায় বেবি" ঠাকুর না স্কেলিটন বুলোই

কিল মারলে মরদ আমার খিদে জুটে যায়

বস্ শুধু দু-টাকা কেজি অন্ন পাঠাও রেডিমেড

স্ট্যান্ডফ্যানে ওড়না জড়িয়ে ঝুলবো




   অজুহাত
সুদীপ ব্যানার্জী

জবাবদিহিতে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে যা

আবার খেলনা হারালে ছেলেবেলার

এইবার আমি ঠিক কেঁদে উঠবো সোনা

বার বার অবহেলায় চুপ করে থাকা

ঈশ্বর সহ্য করার সীমানায় কমা -বাড়া রেখো না

আপার লিমিটে লোয়ার লিমিটে দুব্বো ঘাস

খেলনাটা স্বপ্নে গোল চিবুচ্ছে একমনে

এ সময় পিছু ডাক শুনলেও ফিরে এসো না

প্রতি শণিবার ধুপ জ্বালানোটা  অভ্যাস...


   
সুদীপ ব্যানার্জী
               ধণিয়াখালি,হুগলী।                

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

বাসি লবানের দেশে -২ (BASI LOBANER DESHE-2)

           
বাসি লবানের দেশে -২
সুদীপ ব্যানার্জী
head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

(আগের অংশ পড়তে ক্লিক করুনhttps://sudipbanerjee1982.blogspot.in/2017/11/blog-post_18.html?m=1)

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>




এই মুহুর্তে অজয়ের ব্রিজ পেরোচ্ছে আনুদার বাস। বাদশাহি সড়ক এখন চকচকে পাকা রাস্তা,মসৃণ গতিতে ঝিমুনি এসে যাওয়াই স্বাভাবিক।কিন্তু ঐ যে "সুরথদা কলিং"!ওপার থেকে যে গলা ভেসে এলো, তাও তো শোনা হয় নি বেশ কয়েক বছর।"ভাই,শুনলাম সব।কিন্তু আমি যে যাব... একটা সি.এল.ও বেঁচে নেই...তুমি ঘুরে এসো... বেস্ট অফ লাক"।এই কথোপকথনের মাঝেই চোখ চলে গেল অজয়ের দিকে।শীত শেষ হয়েছে আগেই,তবু ভোরবেলা হাওয়ায় শিরশিরানি ভাব একটা লেগেই ছিল।এখন সূর্য কিছুটা তেতেছে।বাসের জানলা খুলে অজয়ের দিকে দেখলাম।বালি আর বালির মাঝে তিরতির করে বয়ে চলেছে সরু রূপালি সূতোর মতোই।হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেই বর্ষার কথা। বিকেল থেকেই আকাশ থমথমে।রাতের দিকে শুরু হল টানা বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন।মদন স্যার,অভিঞ্জ মানুষ,খুব বেশি দূরে বাড়ি নয়, তবু বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারনে মেসেই বসবাস তার ---এ মেসের ফাউন্ডার-কাম-গার্জেন।ঘন ঘন মাথা নাড়ছেন আর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জড়িয়ে জড়িয়ে বললেন,"এ তো বাণ ডাকা মেঘ রে,মাধব।"তা এই মেঘ ডাকা মেঘের কি মহিমা বুঝলাম সকালবেলাতেই।সাধারণত আমি লেট-রাইজার।ঘুম ভেঙে দেখি মেস ভোঁ ভাঁ।একজনও নেই।যে যার ব্যাগ গুছিয়ে ভোরবেলাতেই প্রথম বাসেই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে যে যার মতো।বৃষ্টি থামেনি বরং বেড়েই চলেছে।অগত্যা সাইকেল নিয়ে ছাতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে, এঁটেল  মাটিতে ব্যালেন্সের খেলা দেখাতে দেখাতে বাসস্টপেজ এ এসে পড়লাম।কিন্তু তাতে কি আর এই বাসি লবানের দেশের বৃত্তকে অতিক্রম করা যায়!এই বৃত্তের ব্যাস,পরিধি,জ্যা, কেন্দ্রকে চেনার খেলা এই বৃত্তের বাইরে থেকে স্কেল,কম্পাসে মাপলে কি আর মনের নাগাল পাওয়া যায়?"মাস্টারমশাই, দেরী করে ফেললেন যে।শেষ বাস বেরিয়ে গেল ৬-৩৫ এ।নতুনহাটের দিকে বাণ,আর তো বাস চলবে না।চলুন ফিরে যাই।আমিও দোকান বন্ধ করবো।আর দোকান খুলে কি হবে..."দাঁত বের করে যিনি একথা শোনালেন তিনি আবার ফিরবেন এই আখ্যানে যথা সময়ে।আপাতত মেসে ফেরা।তিনদিন একা রুমে, ইলেকট্রিকহীন,টাওয়ারহীন,শুকনো মুড়ি চানাচুরে পেটে কিল দিয়ে কাটানো।না,এ তিন দিন কয়েকটি কুকুর ছাড়া আর কোনও প্রাণীর শব্দ বৃষ্টির ঝমাঝমের বাধা সরিয়ে কানে আসে নি।পাশেই ঝোপঝাড়ে ঢাকা ঈদগাহ্।জানলা দিয়ে সামনে তাকালেই মিঞা সাহেবের পুকুর,পুকুর পেরিয়ে মসজিদ,আশেপাশে দিনের বেলাতেও ঘুমিয়ে বাসি লবানের দেশ।রাস্তায় লোকজন দিনের বেলাতেই দেখা যাচ্ছে না।এ অবিরাম বর্ষণ যেন মন্ত্রপূত জল,পুরো পৃথিবীকে ঘুম পাড়ানোর ব্রত নিয়ে কমন্ডলু থেকে নেমে আসছে প্রবল বেগে।অথচ আমার ঘুম নেই।বরং বলা যায় উড়ে গ্যাছে।দিনের
বেলাটা কেটে গেলেও সন্ধ্যাগুলি আর কাটে না।আসলে সন্ধ্যা তো নয় বিকেল থেকেই রাত নেমে আসে এ দেশে।আমি,কিছু অজানা পোকা,একটি মোমবাতি। বাসি লবানের দেশে আমার চারপাশে তখন জিন,পরি,হুরির জগত।রোমাঞ্চিত, ভীত আমি একসময় ঘুমিয়ে পড়ি স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নকে পাশবালিশে জড়িয়ে।বৃষ্টি থামতেই প্রথম বাসেই বাড়ির দিকে যাত্রা।বন্যা হয় বলেই এ অঞ্চলের রাস্তাগুলো উঁচু।দুদিকে মাঠ বলে আর কিছু নেই। শুধু জল আর জল।বড় বড় গাছগুলি একবুক ডুবে মাথা তুলে আছে শুধু।এই অজয়ে ব্রীজের ওপর দিয়ে যেতে গিয়ে বুঝলাম "বাণ" কি বস্তু।অজয় দুকূল ছাপিয়ে পাশের জমজমাট বাজারটিকেও  আপন করে নিয়েছে।সেই প্রথম হেলিকপ্টার থেকে রিলিফ ফ্যালা হচ্ছে দেখলাম...একদল মানুষ ছুটে চলেছে সেই রিলিফ আগে পাওয়ার জন্য।সবাই ছুটছে "রোটি,কপড়া, মকানের"পিছনে। এ ছুট বড় আদিম,বড়ই কষ্টের --এ ছুট স্বার্থপরতার। অথচ এটুকু স্বার্থপরতা না থাকলে প্রাণটাই যে টেকে না।সেদিনের অজয় আর আজকের এই সরু রূপালি শান্ত অজয় ---বাসি লবানের দেশ একবার ভাসায়, আরেকবার ডোবায়...আর এই ভাসা-ডোবার মাঝে এগিয়ে যায় দিন,মাস,বছর...এক নবান্ন থেকে আরেক নবান্নের অপেক্ষায়...

               
ঘড়িতে ৭-৩০ বেজে গেছে দেখে ডায়াল করলাম বাড়ির নম্বরে,"হ্যালো,ঘুম ভেঙেছে?নতুনহাট পেরোলাম।নেমে আবার কল করবো।"লাইন কেটে দিতেই সেদিনের মোবাইলটার কথা মনে পড়ে গেল।প্রথম সেট নোকিয়ার ছোটখাটো আর টাওয়ার পেতে কয়েক চক্কর দিতে হত মেস বিল্ডিংএ।আবার প্রথম দিনের কথা ফিরে ফিরে আসছে।বাস দশ মিনিটের ব্রেক নেওয়ার পর আবার শুরু যাত্রা।কন্ডাকটর এগিয়ে এসে জানাল,"আপনার পাশের মাস্টারমশাই যেখানে নামবেন সেখানেই আপনিও নেমে পড়বেন।"কথাটি পাশের "মিলিটারিম্যান"এর কানে গেল।প্রশ্ন এল, "কোথায় যাবেন?"।উত্তর দিতেই তিনি আমার নাম ও বাসস্থান জেনে বললেন, "আমি পাশের গ্রামের স্কুলেরই টিচার।"তারপর স্টপেজ এল...নামলাম...ভদ্রলোক নামলেন।


                       

আশেপাশের বেশির ভাগ গ্রামই মুসলিম অধ্যুষিত হলেও বাসি লবানের দেশ সদগোপ প্রধান।গ্রামের এক অংশে মুসলিম পরিবারগুলি নিজেদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা নিয়ে বাস করছে।আর অপর অংশে হিন্দু পরিবারগুলি মন্দির,হরিনাম কীর্তন, নানা পালা-পাবন নিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে।দুই ধর্মের মানুষ এত কাছাকাছি থাকায় এর সংস্কৃতিতে তার আর তারটিতে এর---চুপিসাড়ে কোন কালেই মিলে মিশে গেছে কথায়,রান্নায়,পোষাকে---কেউ খেয়ালই করেনি।এই মুহুর্তে বসে আছি গ্রামের মাত্র দু-ঘর বামুনঠাকুরের মধ্যে একজন ভুবন ঠাকুরের দালানে।ভদ্রলোকের এককালে কলেজ স্ট্রীটে নাকি বইয়ের দোকান ছিল।সেই সূত্রে প্রচুর বই পড়েছেন।মৃদুভাষী মানুষটি মাঝেমাঝেই আড্ডা দিতে আসতেন। সেদিন আমি গেছি ওনার বাড়ি একটি বইয়ের খোঁজ নিতে।ছাড়লেন না... অগত্যা চা খেতে খেতে গল্প করছি। বৌদি এরই মাঝে খোঁজ নিয়ে গেলেন আমি "ডিম ভাজি খাব, না সেদ্ধ"।ঐ যে বললাম চুপিসারে একের অভ্যাস অন্যে ছড়িয়ে গেছে বিন্দুমাত্র হাতাহাতি না করে...এখানে সবাই অতিথি আপ্যায়ন করে চা এর সাথে ডিম সেদ্ধ বা ভাজা (ভাজি) দিয়ে।ভুবন ঠাকুর শুরু করলেন,"...এই যে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে যেতে লাগল তার জাতিভেদ প্রথা ও অন্যান্য উদারতা নিয়ে, আর কিছুটা রাজানুগ্রহের খাতিরে...তা সেখান থেকে হিন্দু ধর্মকে এ অঞ্চলে বাঁচালেন চৈতন্যদেব..."।ভুবন ঠাকুর বলেই চলেছেন, কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার মন চলে গেল কাঁচা রাস্তায়।স্বাস্থ্যবান এক প্রৌঢ়, সোজা মেরুদন্ড নিয়ে গজরাতে গজরাতে চলেছেন।একটু ঠাহর করলেই শোনা যাচ্ছে"এই তো হয়েছে শিক্ষার দশা।সব হতচ্ছাড়া স্কুলে পড়ছে!বেয়াদপের দল।সভ্যতা শেখে নি...আর সব মাস্টারের দল...আগে যারা খেতে পেতো না মাস্টার হত...কি তাদের শাসন!আর আজকাল মাস্টাররা সব জমিদারের ব্যাটা...কোনও ডিসিপ্লিন নেই...ব্রিটিশ আমল হলে চাবকে পিঠের ছাল তুলে দিত।"এ ভদ্রলোককে আগেও দেখেছি রাস্তায় মাইকেল মধুসূদনের কবিতা গড়গড় করে বলতে বলতে রাস্তা পেরোতে।ব্রিটিশ আমলের থার্ডক্লাশ পর্যন্ত পড়াশোনা করা এই ভদ্রলোকটি আশেপাশের তিন চারটি গ্রামের মধ্যে একমাত্র মিষ্টির দোকান "অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার"এর মালিক।তবে তিনি এখন আর দোকান করেন না। ছেলেই সামলায় সব।আর উনি সবার সাথে তর্ক করে যান কেন মাইকেল রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় কবি বলে।গ্রামের সবাই আড়ালে ডাকে "মিষ্টি মাইকেল" বলে।ছেলে বুড়ো যেই পারে ভদ্রলোককে এ নামে রাগায়।একটু আগে স্কুলের ক'টা ছেলে এই কান্ডটি ঘটানোর ফলাফল আপাতত ভদ্রলোককে ব্রিটিশ অনুরাগী করে তুলেছে--- বুঝলাম।"...বুঝলেন মাস্টার মশাই,এই হল মানুষের জন্মবৃত্তান্ত... পুরাণ বলুন বা বেদ...এই থিয়োরি সায়েন্সও মেনে নিয়েছে...",ভূবন বাবু বলেই চলেছেন।শেষ কথাগুলো কানে আসতেই আরেক দিনের কথা মনে পড়ে গেল।সন্ধ্যাবেলা মেসের খাওয়ার ঘরে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছি।হঠাৎ দেখি এক বয়স্ক ভদ্রলোক লুঙ্গী, পাঞ্জাবি আর ফেজ্ পরে দরজার কাছ থেকে খেলা দেখছেন।চিনি এনাকে... মানে যাতায়াতের পথে অনেকবার দেখেছি।মুদি দোকানি মজনু দার বাবা।ভদ্রলোক কানে কম শোনেন।"মাস্টার... বল খেলা দেখছ...",বলতেই ইশারা ডেকে চেয়ার টেনে বসতে দিলাম।টিভির দিকে তাকিয়ে খেলা দেখতে দেখতে দেখলাম ওনার চোখ জ্বলজ্বল করছে।বিড়বিড় করে বলছেন,"এখন আর বল খেলা।আমাদের সময় এ গাঁ ও গাঁ... বল খেলার যা ধুম ছিল... এখনকার ছেলেপুলেদের সে খ্যামতাও নেই...আর সে দিল্ও নেই।"আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন, "আচ্ছা!মাস্টার, তুমি তো অনেক পড়াশোনা করেছ, বল তো দেখ যখন আমরা জন্মাই তখন কি হয়ে জন্মাই?"।যে উত্তরটা পেলে উনি খুশি হতেন জানা ছিল সেটা।কিন্তু একটু মজা করেই উত্তর দিলাম "মানুষ"।প্রথমবার শুনতে না পাওয়ায় আবার বললাম উত্তরটি।"কি?...মানুষ?... তুমি মাস্টার খুব চালাক।"---বলে হেসে উঠলেন সেই বৃদ্ধ।তার হাসি,ভুবনবাবুর কন্ঠ,মাইকেলের আবৃত্তি... বৃত্ত ক্রমশ বাড়ছে...এক স্রোতে মিশছে আরেক স্রোত... বাসি লবানের দেশ ক্রমশ নিজের করে নিচ্ছে বহিরাগত মানুষকে।কথা গল্প হয়ে উঠছে...বেড়া ভাঙছে এ ওর... আর কদিনের মধ্যেই নবান্ন..."লবান"আসছে নতুন জোয়ার নিয়ে...

                  (ক্রমশ)

head>
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
          google_ad_client: "ca-pub-4286055196262572",
          enable_page_level_ads: true
     });
</script>

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0


বৃত্তের বাইরে (BRITTER BAIRE)

বৃত্তের বাইরে
সুদীপ ব্যানার্জী

স্টেশনের এদিকটাতে চট্ করে কেউ আসে না।প্ল্যাটফর্ম শেষ হতে না হতেই লাইন দুটোর চারপাশে অন্ধকার। টয়লেটের দূর্গন্ধ পেরিয়ে ঝোপঝাড় আর কিছু শ্যাওড়া গাছের ছায়া নিয়ে জায়গাটির দুর্নাম অনেকদিনের।
          সিগনাল পোস্টের আগে এই গা ছমছমে পরিবেশ!বেশ এনজয় করছি একাকীত্বকে।এই যে জনবহুল স্টেশনের এতো কাছে আমি "নেই"হয়ে গেছি,ভেবে বেশ আনন্দ হল।আসলে বরাবরই আমি একটু চুপচাপ, পালানো গোছের। ক্লাস নাইনে জ্যামিতি ক্লাসে কম্পাস নিয়ে বৃত্ত আঁকতে গিয়ে প্রথম রিয়েলাইজ করি ব্যাপারটা।যেখানেই ঘটনার সূত্রপাত, আমি পত্রপাঠ কম্পাসের আওতার বাইরে।হঠাৎ মনে পড়ে গেল মলয় স্যারের হাতের কাঠের জ্যামিতি বক্স।না,ঐ বড় কম্পাসের র‍্যাডারও ক্যাচ করতে পারে নি আমায়।এই যে যা ঘটছে, সেখান থেকে আমি বেরিয়ে গেলাম,আর মঞ্চে প্রবেশ করল কুশীলবেরা একে একে,আমি তখন নিবিষ্ট চিত্তে দর্শক আসন গরম করছি,প্রতিটি মুভমেন্টের নোট রাখছি।এ অভ্যাস বেশ রপ্ত করেছি। এখন যে মেয়েটি ১নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছে ঘণ ঘণ,ও কি জানে ওর মুখের দুশ্চিন্তার ছাপ অনেকটা প্লাস্টারওঠা হলুদ দেওয়ালের মতো।ও কি বুঝতে পারছে আমি ওর মোবাইলের দাম আন্দাজ করছি আর ভাবছি মেয়েটা এতো টাকা পেলো কোথায়?ও কি জানে ওর পাশে বেঞ্চে বসে থাকা টেকোটা ঘুমে ঢুললেও চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে ওর শরীরে? এ সব বৃত্তের বাইরে না গেলে জানতে পারতাম কি?স্থান মাহাত্ম্য কি না জানি না,আমি যেন দিব্য দৃষ্টি পেয়েছি। খুব হাসি পাচ্ছে।যে আমি কিনা চিরকাল ঘটনার সেন্ট্রাল স্টেজ ক্যানো,বাউন্ডারি লাইনেও দাঁড়াইনি কোন দিন,দেখতে পাচ্ছি --সেই আমাকেই স্ট্রেচারে করে চারজন লাল জামা পরা লোক নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার এই জায়গাটা থেকে।

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

Boishakhi Dupure

বৈশাখি দুপুরে
সুদীপ ব্যানার্জী

নীরবে থাকি বেমানান পাখিডানা,সরু ঠোঁটে...
ক্লান্ত। দুপুরের রোদ খুঁটে খুঁটে।

জিভের আর্দ্রতা শুষে নিল নৈশব্দ
বৈশাখী শুকনোয়...

তবু বুনে চলা পোশাকি ফসল।
হৃদয়ের গান ফোঁটা ফোঁটা...
ছিটে আয় স্মৃতি থেকে শিশু আম
বিকেলের ধুলো মাখা ঝড়ে।

বেশ প্রিয় খেলা এখন... একলা বাড়ার সময়
গোছানো মাঝারি স্যুটকেসে...
দুপুরে ঢিল ছুঁড়ে গাছে
ডেকে নেবো সব বুড়ো বন্ধুদের...

ঝিমমারা পাড়াগাঁ। কেউ নেই...
ছেলেবেলা খুব আজ শহুরে
কাঁচামিঠা আমপোড়া প্যাকেটে...

ঘামভেজা কলারে দাগ নেই ময়লার...

RUPKATHA HOTE PARTO (রূপকথা হতে পারতো)


রূপকথা হতে পারতো!!!
-------------------------------------
আয়নার দিকে তাকালেই আমি ফুল হয়ে যাই।অথচ নিজের দিকে তাকালে নিজেকেই দেখছি।না না...দোষ আয়নার নয়।সেই যে একটা গল্প ছিল না... সেই সুন্দরী মেগালোম্যানিয়াক রাণি... আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজ বিশ্বসুন্দরী খেতাব ধরে রাখতেন,সেই কথা বলা আয়নাটি পেয়েছি--- এমন চিরাগসম আলাদীন কপাল অন্তত আমার হেডে দেখি নি।
কেসটি তবে কি?
আরেক বার আয়নার দিকে তাকিয়ে কনফার্ম করলাম।ফুলই তো...আলো জ্বালিয়ে, নিভিয়ে, অবস্থান পালটে পালটেও আমি আয়নায় আমাকে পেলাম না...
ধরলাম এখানে আয়না একটা পাতি রূপক।কিসের?ধরলাম সেটা পাব্লিক ওপিনিয়ন...হতে পারে আত্মীয় স্বজনের ছিদ্রহীন ছাঁকনি...বন্ধুবান্ধবের ভালবাসাও হতে পারে...এমন কি আমার মনের সুপ্ত আকাশ হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট।আয়নাটা অ্যান্টি-আমি কি?...
এই যে যতবার আমি আয়নাটা দেখছি আর আয়নাটার অন্য কিছু হয়ে ওঠার প্রবাবিলিটি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে...এই ব্যাপারটাকে থামানো যাচ্ছে না।এ যেন গড়ানে রাস্তা...আর লাউ গড় গড় লাউ গড় গড় বুড়ি গড়িয়েই যাচ্ছে।আচ্ছা আমি কি রূপকথা লিখব বলে ফুল হয়ে যাচ্ছি?আয়নার ফুল আর লাউয়ের খোলে লুকিয়ে থাকা বুড়ি --- রূপভেদে কি আমিই!চোখ চলে গেল আয়নায়...দিব্যি ফুলটি বিউটি ছিটিয়ে তাকিয়ে আছে...
গায়ে জ্বালা ধরছে এবার...অসহ্য লাগছে ওটাকে...আলোকবিঞ্জানের সব কটা সুত্রের ওপর বড্ড রাগ হল...এ কোন ব্যতিক্রম রে বাওয়া!
আচ্ছা আয়নায় নিজেকে ফুল ভাবতে ভাল লাগতেই পারে,তা বলে সত্যিই ফুল হয়ে ওঠা...শুনেছি রূপকথা পোয়েটিক জাস্টিস দেয়...এ তো দেখছি ক্রমশ সব স্ট্যাটিস্টিকসকে কলা দেখিয়ে, সায়েন্স ফিক্সনকে বোগলদাবা করে...আমার টোটাল অস্তিত্বই মাদারিখেলার ভেল্কিটোনা করে এনামেলের বাটিতে কয়েনের ঠকাসমার্কা বেওসা ব'নে গেল।
তবে ফুলটা কিন্তু নিজের জন্য ফোটে  নি...
নিজের রূপ কি ও দেখতে  পায়?।ফুল কি নিজের গন্ধ নিজে পায়?প্রশ্নগুলো যখন চলেই এলো...দেখছি ভাবনার স্পেস বেড়েছে...ডাইমেন্সনও...
থ্রি ডি আয়নায়
তখন ফুল থেকে ফল.ফল...বীজ...মহীরুহ...
ক্লোরোফিল...অক্সিজেন...নিঃশ্বাস...
এই এতোক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম...আয়নায় স্লাইড শো...যে যে গাছগুলো থেকে অক্সিজেন ঝেপেছি...সেই সব গাছের ফুলগুলো আয়নায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে... আয়নায় আমি হবে বলে...
...শালা গাছ লাগাবি না!!!!



*সুদীপ ব্যানার্জী*

"Dover beach" in Bengali

ডোভার বিচ্
ম্যাথু আর্নল্ড (ভাবানুবাদ-সুদীপ ব্যানার্জী)

সমুদ্র বেশ শান্ত আজ রাতে,
ভরা এ জোয়ারে,সুন্দরী চাঁদ শুয়ে
প্রণালির স্রোতে;দূরে ফ্রান্স উপকূলে
আলো জ্বলে আর নেভে;এপারে ইংল্যান্ডে
পাথুরে চূড়া সব দাঁড়িয়ে,
মাথা উঁচিয়ে,আবছা অথচ বিশাল...

চলে এসো জানলায়,কি মাধুরী এ হাওয়ায়!

শুধু,জলকণারা ঝিরিঝিরি ঝরছে যেখানে,
আর জোছনা মেখে মাটি মিশছে সাগরে,
শোনো!আওয়াজ পাবে তুমি
গুঁড়ো গুঁড়ো পাথরের....

স্রোত টেনে নিয়েছিল ওদের।
আর,ফেরার পথে আছড়ে ফেলে
সাগরের খুব উঁচু পাড়ে...

শুরু হয়ে শেষ হয় বয়ে যাওয়া...
আবার শুরু হয়ে,
শব্দমুখরিত মৃদু তালে,
বিষাদের শাশ্বত সুর নিয়ে এলে শব্দরা...

বহু আগে সফোক্লিস
শুনেছিল এই সুর আজিয়ান সাগরে
আর এ সুরের ঝংকার
ফোটাত হৃদয়ে তার
কাদামাখা অস্পষ্ট ভাঁটা আর জোয়ার
দুঃখভরা মানব জীবনের;আমরাও
দূরের এই উত্তর সাগরের শব্দ শুনি
আর সেই ভাবনাই খু্ঁজে পাই...

বিশ্বাস সাগরটিও
পূর্ণ ছিল কানায় কানায়,একসময়
এ দুনিয়ার বালুচরে লেপ্টে ছিল শুয়ে
চকচকে ওড়নার মতোই...

কিন্তু এই মুহুর্তে আমি শুনছি
তার বিষণ্ণ, গা এলানো গর্জন পিছিয়ে আসছে,
নি:শ্বাস নিতে রাতের বাতাসে...
নামছে অনন্ত বিষাদঘ্ণ প্রান্তরে
উলঙ্গ টুকরো পাথরের এই জগতে।

আহ্!প্রিয়তমা,এসো আমরা বিশ্বস্ত হই পরস্পরের...
আমাদের সামনে যে পৃথিবী শুয়ে,
মনে হয় স্বপ্নের!
কি বিচিত্র, কি সুন্দর আর কতোই না নতুন।

আনন্দ,প্রেম আর আলো বাস্তবে যদি না থাকে,
যদি না পাই নিশ্চয়তা,শান্তি অথবা সান্ত্বনা বেদনায়,
নেমে আসে অন্ধকার এ সমতলে
মুছে যাব সংগ্রাম আর মারামারির এই বিপদবার্তার দোলাচলে...

বেচারা সৈন্যরা এখানে লড়াই করে
রাতের অন্ধকারে।



আরও পড়তে ক্লিক করুন নীচের লিঙ্ক
https://sudipbanerjee1982.blogspot.in/2018/01/blog-post.html?m=1


চন্দ্রাহত

চন্দ্রাহত...
-------------
              
   একটা গোটা চাঁদ পূর্ণিমার
   ঢেকে দিচ্ছে কালো হাত
   খেজুরে আলাপ কল্পণার
   মেখে খাচ্ছে পোড়াভাত...
           
  জোছনা পাতে এই রাতে
   দাওয়াত না কি হাতছানি
   চশমা খোলা দুই চোখে
   উপচে ওঠে সে ফুলদানি...
              
   ফুলের আলো নরম লাইট
   গরম কড়ায় অল্প স্যাঁকা
   পূর্ণিমা  চাঁদ  পরম সাইট
    বর্ণমালাতে  মধুতে  মাখা...
             
   চন্দ্রবিন্দুর চাঁদ ফ্য্যাকাসে
   কালোহাতে বিন্দু শেখায়
   প্রথমরাতে বড্ড একা সে
   মুছে ফোটা আয়ু রেখায়.. .
             
আসলে গ্রহণ লেগেছে কবিতায়
রাহু-কেতু এসে মাথা খায়
পক্ষীরাজ আসে তিনবার লাফায়
জোছনা লুটোয় বারান্দায়...
            
অনেক চাঁদ এখন স্যাটেলাইট
দম দেওয়া আকাশ ভিতে
খোলস ছাড়া  বোতলই পাঁইট
মাতাল মাপে অলীক ফিতে...

সুদীপ ব্যানার্জী

বেঁচে আছি টুকরোয়

বেঁচে আছি টুকরোয়
সুদীপ ব্যানার্জী,ধণিয়াখালি

কিছু নেই এদিকে। শুধু খালি খালি হাত দুটো।
ভেসে এলে খড়কুটো, মুঠো ভরে বুকে নিই।
আয়নার পাশে বসে, নির্ভার মহাকাশে রাত নেই।
জাত নেই। অভিঘাত নেই। মসৃণ যাতায়াত এ।

একটু খড় আর মাটি, চেয়ে রাখি।কিছু ঋণ এ।
গড়া হলে মূর্তিটি,ফেলে রেখে সেকেলে চাবিকাঠি,
দৌড়াই।ফিরে আসা। বিকেলের ট্রেনে চাপি।

পাশাপাশি কেউ নেই...হুইসলে একা বাজি...

দেখা হলে কথা বলে নিরিবিলি,খুলে রাখা জানলাটি..

পাখিসব প্রজাপতি। উড়ে গেছে রাতারাতি। বাগানে।
আয়নার সামনে রঙ মাখি অবয়বে। মুছে যাবে খুচরোয়।

ছাই মেখে শবদেহে রাত নামে। সমারোহ।কাতরাই।

সাঁতরাই মহাকাশে।একলাই নগদে।
পাশে  মৃত কে ও?

সাথে ছিল সেও। তবু খড়কুটো আর মাটি আনি।
তুলি দিয়ে রেখা টানি।

গড়া হলে মূর্তিটি...
ভাঙি এ আয়না। মন কেও চায় না।

বেঁচে থাকা টুকরোয়।

জনতার নামতা

জনতার নামতা

--------------------------------------------

    সত্যের ললাটে বার হাত ঘোমটা
    দায়হীন তথ্যই জনতার নামতা
   

♥     সে ছিল এক যুগ।মহাকবির জমকালো খাগের কলম দাগিয়ে দিয়েছে "সত্য যুগ" আখ্যায়।আহা! কোথায় হারাল সে সাজানো বাগান!সে সময়ের কুশীলবেদের কুশ পুত্তলিকায়  আগুন ধরিয়ে জাস্ট সেঁকে নেবো আজকের ন্যাতানো বিড়িগুলো--এ খোয়াইশ্ আমার বহুদিনের।যাই হোক...সে সব হায়ারোগ্লিফিক,মনোলিথ, সিস্টোলিথ প্রায় পুরাণের হাইড্রলিক ফাটিয়ে আমি এখন আধুনিক।পেরিয়েছে দ্বাপর,ত্রেতা। তবে গল্পের ক্রেতা কমেনি।কলিটাও যা তা!সেই যে ক'বে থেকে এঁটে বসেছে... ব্যাটা আস্ত একটা" গিলগমেশ"!"অতিথি তুম কব যাওগে?" কেস।তবে বেঁচে থাক্ ভাই অন্তর্জাল!হাল ধরেছে ঠিক।মানে,দেখুক পাড়া পড়শিতে, কেমন যুগ এনেছি পৃথিবীতে।কলির ওই ল্যাতল্যাতে পটলের ঝোল আর ট্যালট্যালে অম্বলের অজীর্ণ রোগে শীর্ণ উদাসী পেটে চাড্ডি বিরিয়ানি আর পাঁঠার ঝোল।খালি নেট খোল ---একটা কচি যুগের ফড়ফড়ানি ফিল কর...তরতর করে এগিয়ে যাবে তরণি... হিভ্-এ-হৈ...হিভ্-এ-হৈ...মার তড়কা মসালা...ডাগর যুগের নধর গতর দিব্যি ঘাই মারবে বুকে।যেই না বলেচি গিন্নিকে এ কথা,ঘায়েল করা ভ্রূ দুখানা কুঁচকে প্রশ্নবাণ হানলেন,"ব্র‍্যান্ডের নামটি কি?"।কি মুশকিল, আমার কবিতার দিব্যি একটি ফোঁটাও আমি চাটিনি...দূর থেকে বোতলগুলির চাঁদপানা মুখগুলি দর্শণেই শালা নেশা ধরে যায়, লিভারে ধারণ করলে আবার কি আবাহন করিবে ভাবলেই ভির্মি খাই।জন্ম ইস্তক আমি না তোমার গুডি গুডি হাসবেন্ড! যাক্ গিন্নির কথা।সন্দেহ করাটা, ইয়ে মানে,...থাক আর বল্লুম না।কিন্তু গিন্নি না খেয়াল করেও একটা মোক্ষম প্রশ্ন তুলে গেছেন(একসাথে বসবাসের সাইড এফেক্ট)।ব্র‍্যান্ড!ইয়েস! প্রতিটি যুগই তো একেকটি ব্র‍্যান্ড!তা কি নাম এ যুগের?ডিজিটাল?ধুর...নামে তো আভিজাত্য চাই।এই যেমন ---সুদীপ পেলে ব্যানার্জী বা প্রিন্স কমল হিলসা সেন। মারলুম গুগল বাবা জীবনে সার্চ(আহা মেধার কি দুর্গতি)।ইউরেকা!মানে নাম লেখা।ধুমধাম নেচে নিলাম খানিক ক্ষণ।জিও মেরে লাল ইকোনমিকস। অন্নপ্রাশনের আগেই দাগিয়ে দিয়েছে ওরা --- Post Truth Era মানে আমাগো বাংলায় সত্য- উত্তর যুগ।তা মালটি কি?পাগলা ঝাঁঝ দেখিস না! এ নেহাত আমার তোর নোয়াপাতি জীবনের ভোর।সত্য যুগের রিমেক।রিমেকের মজা কোথায়?সবাই জানে এটা নকলি,তবু শোনে ... পারলে দু কলি নেচে নেয়।রিমেকের কোন দায় থাকে না(বাজারি রিমেক অবশ্যই)।তা এ যুগও সত্যের উপাসক।কিন্তু সে উপাসনায় তথ্য প্রমাণের দায় কেউ নেবে না।রিয়্যালিটি আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির তফাত এখানেই।শুধু কিছু লিখে ছেড়ে দাও...মুহুর্তে ভাইরাল... সত্যি না মিথ্যা, যাচাই করার সময় কোনও চাচারই নেই।কিছু একটা বলে দাও...আপনি চেপে যাবে ঘাড়ে...এ এমন মজার উলোট ঘোড়া।এই ঘোড়াই কারও ক্ষমতার ট্রাম্পকার্ড..রাজনীতি,জাতীয়তা-বাদ,অর্থনীতি,ধর্মনীতি, জীবন-যাত্রা মানে লাইফস্টাইল,সুস্থতা,যৌনতা,কবিতা,জটিলতা,যুদ্ধ..,সাংবাদিকতা আর লাখ লাখ মিডিয়ার এটিই বর্তমান ধর্মকাঁটা।সুতরাং হে পোস্ট ট্যাগানো,অঙ্গুলি হেলানো নব্যযুগের কাণ্ডারিগন... একে একে নিজের পয়দা করা ইতিহাস, ভূগোল ছড়িয়ে দিন...কেউ প্রশ্ন করবে না সত্য-উত্তর এ যুগে।বরং দৈববাণিবৎ বিশ্বাস করিবে।সোসাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলিই এখন নিত্য পঠিত পপুলার ধর্মগ্রন্থ।আর আলবার্ট পিন্টোর গুসসা হ'লে হবে...আমরা জেনারেল পাব্লিক! সব ক্ষেত্রেই আমরা ধার্মিক।বিশ্বাসে মিলায়ে প্রগতি... তর্কে শুকাবে সমুদ্দুর...তাই না?

             ♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

সুদীপ ব্যানার্জী

মাঝরাতের কবিতা

সুদীপ ব্যানার্জী

শব্দ নেই।ফ্লাইওভারে দাঁড়িয়ে দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি। সন্ধ্যা পেরিয়ে  মাঝরাত... প্রেমিকাকে আজ  একলা পেয়েছি কাছে..চাঁদ ব্লাশ করছে ঠিক,ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ঘেরাটোপ...ঠোঁটে জোনাকি মেখেছি.. মুছে গেছে লিপস্টিক...তৃপ্তির ভেজা গন্ধ নাসারন্ধ্রে। ডিজেলের পরিবর্ত।নব্বই মিনিট অতিক্রান্ত।অ্যাডেড টাইমে  সদ্যজাত এ দ্বীপ পরিসর চাইছে আরও...

মেট্রোর জনসমুদ্রে এখনও একটানা ঘুমন্ত জলোচ্ছ্বাস । গরম নিঃশ্বাস।বড় বেশী নিষ্প্রাণ! এখনও বেঁচে ...প্রিয় মাঝ রাত।হাওয়া বইছে। পিউবার্টির মতোই অমোঘ...পবিত্র।সারাদিন ভার্জিনিটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পর... ব্যস্ত শহর নড়াচড়ায় অক্ষম এই মুহুর্তে...সব চিল্ড্রেন'স পার্ক খুলছে...গভীর রাত। খুশি দোল খায়।চুপচাপ। ভয়ে ভয়ে...সাঁতরে ঐ কয়েক  দমকা অবহেলা,খুব শিশু ওরা...মুঠো করে ধ'রে স্বাধীণ স্বাধীন আরেকটু জীবন্ত রাত্রিবেলা...ভোরবেলা বালিঘড়ির চোখ  চিক্ চিক্ করে...

আদ্রার মহালয়া

  
  ভোরবেলায় শব্দবাজী আর  রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডিপাঠ গড়পড়তা বাঙালির গতানুগতিক মহালয়ার নস্টালজিয়া। রেল শহর আদ্রার শারদ সকালেও  এই তো সেদিনও মহালয়া নেমে আসতো ডি.এস.টুফর্টি টু বাই সি তে।আমাদের বাড়ির  পরিচয় ছিল এই নম্বরটাই। বাল্যবন্ধু, সহপাঠী শাশ্বত'র কাছে শুনেছি সেই বাড়ি আর নেই।এক জীবনে মানুষের যে ক'টা বাড়ি বাড়ি হয়ে ওঠে!
      যাক্।মহালয়ায় ফিরে যাই...তো মহালয়ার ভোর আমাদের ওখানেও আর চার -পাঁচটা জায়গার মতোই তবুও কতোই না মৌলিক,কতোই না আপন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ট্রেনের সাইরেন... মহালয়ার ভোর নামছে  "বাজল তোমার আলোর বেণু" উচ্চারণের অবকাশে ট্রেন ছাড়ার হুইসল... নতুন শুরুকে এ ভাবে স্বাগত জানানো হয় আর কোথায়?এরপর যদি বলি, পৌনে পাঁচটা নাগাদ চণ্ডীমন্ত্র আর অদূরের মসজিদের আজান মিলেমিশে ডি-এস টু ফর্টি টু'র এক বালকের মনে যে অনুরণন তৈরী করত একতার... তারই সুর ছুঁয়ে আজও বেঁচে আছি---তাহলে খুব ভুল বলা হবে না।
      আজও মহালয়া আসে...মহালয়া যায়...কিন্তু রেখাপাত করে না।কি জানি সেই পরিবেশটা পাই না বলেই এটা হয় না কি!
           সেই ছোটবেলায় রোমাঞ্চিত আমি, বুকের ভেতর কেমন কেমন আনন্দ নিয়ে এখনও জেগে উঠতে চাই...সামনের মাঠ,নর্থ হেলথ সেন্টার,প্রাইমারী স্কুল ছাড়িয়ে...এখনও কি তেমনই মহালয়া নামে?মিলিয়ে নেওয়ার ফুরসত মেলে না!
         বেনিয়াশোল পেরিয়ে রঘুনাথপুরের দিকের শ্মশাণে শুয়ে থাকা আমার  মা ---আদ্রা থেকে উঠে এসে মহালয়ার ভোরে কপালে হাত বুলিয়ে দেবে মিষ্টি করে, ঘুম ভাঙিয়ে বলবে,"সুমন,ওঠ...রেডিওতে মহালয়া শুরু হচ্ছে"...এ স্বপ্নটি প্রায়ই দেখি...জানি ভোরে দেখা স্বপ্নও সত্যি হয় না...
        কিছু শিউলি ফুলের গন্ধ... আমার গ্রামের বাড়ির ভোরবেলা...আজও আগমনি গান গাইতে গাইতে ভোরবেলা খঞ্জনি বাজিয়ে এক সুমধুর কন্ঠ উমার বাড়ি ফিরে আসার গান গেয়ে যায়।আদ্রার সেই মহালয়া আর আসে না....

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

বাসি লবানের দেশে

বাসি লবাণের দেশে (১)
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
     সুদীপ ব্যানার্জী
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

"আজব রং ফকিরি সাধা সোহাগিনী সাঁই।
ও তার চুপিসারি ফকিরি ভেক কে বুঝিবে রাই।।
সর্বকেশী মুখে দাড়ি
চরণে তার চুড়ি শাড়ি
কোথা হতে এল সিড়ি

... জানতে উচিত চাই।।
ফকিরি গোরের মাঝার
দেখ হে করিয়া বিচার
ও সে সাধা সোহাগী সবার
আধ ঘর শুনতে পাই।।
সাধা সোহাগিনীর ভাবে
প্রকৃতি হইতে হবে
সাঁই লালন কয়, মন পাবি তবে
ভাব সমুদ্রে থাই।।"
     
ঠিক দশ বছর আগে বর্ধমান থেকে মার্চ মাসের এরকম দিনেই  বাসে চেপেছিলাম।লাগেজ বলতে কিছু জামা- কাপড়, বেডিং--- যে টুকু না নিলেই নয়।ওখানে থাকতে পারবো না চির জীবন ---এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম।আজ দশ বছর পর আবার ফিরছি সেখানে একটা জরুরি  কাজে।বাস তিনকুনিয়া ছাড়িয়ে স্টেশণ পেরোচ্ছে। আশেপাশের অনেক কিছুই বদলেছে। আমিও বদলেছি সময়ের নিয়মে।জি.টি রোডের ওপর সেই সস্তার পাইস হোটেল যেখানে হোর্ডিং ঝুলতো--"পেট ভোরে ভাত ছয় টাকায়",সেটা দেখলাম না। ঝকঝকে কিছু নতুন দোকান কচুরি, জিলিপি,সীতাভোগ নিয়ে এই সকাল ছ'টাতেই বেশ সরগরম।সেদিনের সেই সকালটা এতো চকচকে ছিল না।বর্ধমান টাউন পেরিয়ে উত্তরে বাস যত এগিয়ে গেল ততই আশপাশের মাঠ,বাড়ি,মানুষগুলো ক্রমশঃ বড় বেশি ধুলো মাখামাখি করে বছর ২৩এর যুবকের চোখে  প্যাস্টেল কালারে এক রঙীণ কিন্তু যেন কিছুটা মলিন জগতের সঙ্গে অযাচিতভাবে পরিচয় পর্ব সেরে নিতে চেয়েছিল।এই যে প্রথম দেখা,এ যে শুধুই প্রস্তুতি ---প্রস্তুতি এক অন্য অধ্যায়ের,এক অন্য পথে হেঁটে যাওয়ার সূচনা--- বুঝিনি।আনু'দার ডাকে চিন্তাসূত্র কেটে গেল,"অনেক দিন পর এ লাইনে---ট্রান্সফার হয়ে গেছেন, না কি?সুরথবাবু কেও দেখি না"!আনুদা!বাস কন্ডাক্টর এই লাইনে বহুদিনের।তখন ওর বাসেই সোমবার যাওয়া আর শণিবার ফিরে আসা।না কি সোমবার ফিরে আসা আর শণিবার যাওয়া?আনুদার দিকে হেসে ভাড়া দিয়ে দিলাম সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে।বরাবরই আমি কম কথা বলি, আনুদা জানে..."আর বলবেন না,আজকালকার প্যাসেঞ্জারদের কথা।ছিল সেই সব দিন...আপনারা হৈ হৈ করতে করতে যেতেন... আমাদের সাথে মিশে যেতেন...এখন গাড়িও বেড়ে গেছে...আর... "...আনুদা আরও কিছু বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে গেল বাসের সামনের দিকে।সেদিনের কথা আবার মনে পড়ে গেল।আনুদার বাসেই তো চেপেছিলাম।গন্তব্যস্থলের নাম বলে দিয়েছিলাম।এলে জানিয়ে দিতেও অনুরোধ সারা।একটু পরে টুপি পরা এক লম্বা,চওড়া, স্বাস্থ্যবান ভদ্রলোক এসে বসলেন আমার পাশের সিটে।ডেলি প্যাসেঞ্জার মনে হল।অনেকেই চেনেন।ঘাড় নাড়ানাড়ি,হাসি ---এসব আর কি।ভদ্রলোককে দেখে আমার মিলিটারিম্যান মনে হয়েছিল।তিনঘন্টা জার্নির মাঝে দুঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট এই ভদ্রলোকের সাথে একটি কথাও হয়নি।অথচ, এই লোকটার সাথেই আগামি কয়েক বছর ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হবে --কে জানতো? বাস এই মাত্র কর্জনা চটি পেরিয়ে এলো। প্রতি সোমবার এখান থেকেই আরেকজন উঠতো ---মনে পড়তেই মোবাইলে ভেসে এলো "সুরথদা কলিং"---চমকে উঠলাম।

             

বাদশাহি সড়ক দিয়ে বাস এগিয়ে চলেছে। শেষ স্টপেজ মুর্শিদাবাদের কান্দি।ওখান থেকে আরও উত্তরে যাওয়ার বাস যায় NH34 ধরে। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যোগাযোগের শর্টেস্ট রুট ।সময়কাল ২০০৬। তখন কিছুটা ঘুরপথে কান্দিগামী বাস বর্ধমান, বীরভূম জেলার প্রান্তিক অঞ্চলগুলি দিয়ে মোরামের রাস্তায় লাল ধুলো উড়িয়ে, ভিড়ে থিকথিক করতে করতে মানুষ,ছাগল,মুরগী, হাঁসসহ প্যাসেঞ্জার নিয়ে বড় বড় গর্তকে ড্রিবল্ করতে করতে এগিয়ে চলতো ধিকিধিকি চালে।বাস এগোচ্ছে... আর পেরিয়ে যাচ্ছে একে একে অপিরিচিত সব নাম--- মঙ্গলকোট,নতুনহাট,বাসাপাড়া,খুজুটিপাড়া...ছোট ছোট গ্রাম,ক্ষয়াটে চেহারা,ন্যাংটো শিশু,আতরের গন্ধ,মাটির দোতলা,একতলা বাড়িঘর,মসজিদ,পুকুর,নয়ানজুলি...অন্ধ বোষ্টমের গলায় কন্ঠি,বোরখার আড়ালে মহিলা...আর চারপাশে শুধু মাঠ আর মাঠ।বেলঘরিয়ার মেস জীবন থেকে কয়েকমাস আগে বাড়ি ফেরা চোখে এসবই নতুন। বাদশাহি সড়কের এই ব্যাকগ্রাউন্ড
যে কলকাঠি নাড়তে শুরু করে দিয়েছে তার প্রান্তিক চেতনার ডালি নিয়ে,বোঝা হয় নি সেদিন।তখনও জানি না এ সড়কের নাম "বাদশাহি " কেন।তখনও সুরথদা বলেন নি,"বুঝলে ভাই,হয়েছে কি,গৌড়ের বাদশাহ তো আক্রমণ করলেন বর্ধমান।ধ্বংস হল বহু হিন্দু মন্দির।আর মানুষ তো মরলোই।এদিকে এক বামুন ব্যাটা এ সব কীর্তি দেখে ঝেড়ে দিলে অভিশাপ---বাদশা তুমি যেই নিজের রাজধানীতে ফিরবে,সঙ্গে সঙ্গে তোমার মৃত্যু হ'বে।এবার তো বাদশা পড়লেন মহা চিন্তায়।রাতের নিদ্,দিনের আরাম ---সবই বিগড়ে গেলো।এই সময় এক পীর বাদশাহকে পরামর্শ দিলেন যে রাজধানী ফেরার পথে এক আজানের আওয়াজ অন্তর(মানে এক মসজিদে আজান দিলে যদ্দুর শোনা যায় আর কি)বাদশাহ মসজিদ তৈরী করতে, পুকুর তৈরী করতে আর যাতায়াতের রাস্তা তৈরী করতে করতে রাজধানীর দিকে এগোতে থাকুন।এই ভাবে যদ্দিনে বাদশাহ রাজধানী পৌঁছাবেন তদ্দিনে তার এন্তেকালের সময় হয়ে যাবে---বাদশার এই আইডিয়া পছন্দ হল...আর তারজন্যই এই রাস্তা...বুঝলে ভাই..."।সুরথদা পাশে বসে আছেন।এখনও পরিচয় হয় নি।কথা হয় নি।রাস্তায় আটমাইল অন্তর মসজিদগুলির অবস্থান জানা হয় নি।পেরিয়ে যাচ্ছে বড় পুকুরের পর পুকুর।বটগাছ,মাটির গাঁথুনি,মাটির ইঁটের ইতিহাস নিয়ে কয়েকটি পরিত্যক্ত মসজিদ আর সবুজ গাছে ভরা কবরস্থান পেরিয়ে বাস থামবে যেখানে, সেই চৌমাথা থেকে ডানদিকে ধরে এগোলে কাটোয়া,বাম দিকে বাস যাচ্ছে বোলপুর,সোজা রাস্তা কান্দি... আর বর্ধমান শহরকে পিছনে ফেলে এসেছি ঘন্টা আড়াই।প্রস্তুতি শুরু নতুন চ্যাপ্টারের।হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছে বাসি লবাণের দেশও তাদের "ঝিলিমিলি মাস্টার"কে প্রথম দেখার অপেক্ষায়---বৃত্তের সাথে বৃত্ত যোগ হওয়ার মুহুর্ত... না কি,আলাদা নতুন বৃত্ত অন্য বৃত্তদের শুধু মাঝে মাঝে ছুঁতে পারা না পারার দোলাচল...আপাতত দশ মিনিট বাস দাঁড়াবে এই স্টপেজে।

                (ক্রমশ)

google.com, pub-4286055196262572, DIRECT, f08c47fec0942fa0

তিনটি লেখা...